চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে কয়েক দিন

আশফা খানম

২৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ

আমরা অস্থির তার দেশের মানুষ হলেও সেখানে অত্যন্ত স্থিরতার ও শৃংখলার পরিচয় দিলাম। আমরাও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে ট্রামে চড়বার সুযোগ পেলাম। ট্রামে চড়বার সাথে সাথে এর কিছুক্ষণ পর ট্রামের সাউন্ড বক্সে এক ব্যক্তি নাইট সাফারীর পশুগুলো সম্পর্কে র্বণনা করা শুরু করে। ট্রামটি খুব ধীরগতিতে চলছিল এবং যখন যে পশুকে অতিক্রম করছিল তখন সেই পশুর নাম, প্রজাতি, বাসস্থান, খাদ্যাভাস, বৈশিষ্ট্য, বর্তমান পৃথিবীতে পশুটির অবস্থা, সংখ্যা প্রভৃতি তথ্য ইংরেজীতে বলছিল। ফলে যাত্রাটি উপভোগ্য ও শিক্ষণীয় হয়ে উঠে।

ফ্ল্যাশ লাইটে ছবি না তুলতে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছিল। এতে হিমালয়ান গ্রিফন শকুন (ঠঁষঃঁৎব), বার্মার গৌর (ডরষফ ঈধঃঃষব), নেপালিজ বিশাল সাম্বার হরিন সাথে সোনালী শেয়াল, পেলিকেনস এবং ১ শিং ওয়ালা রাইনোর দেখা মিললো। ট্রামের দু’ পাশে প্রকৃতি দিয়ে গড়ে তোলা উন্মুক্ত খাচায় পশুগুলো যার যার নিজস্ব বাসস্থানে কৃত্রিম চাঁদনী আলোয় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এছাড়াও ইন্ডিয়ান ঝঁন ঈড়হঃরহবহঃ সেকশন অতিক্রম করার সময় ঝষড়ঃয ভালুক, ডোরাকাটা হায়েনা, ঝধিসঢ় ফববৎ, এরৎ সিংহ দেখা যায়। এরপর ঊয়ঁধঃড়ৎরধষ অভৎরপধ অতিক্রম করলে এতে জিরাফ, সিংহ এবং সাভানার মতো প্রাকৃতিক আবহাওয়া সৃষ্টি করে সেখানকার বিভিন্ন পশু দেখানো হয়। ইন্দো-মালয়ান জবমরড়হ এ আছে মালয় বাঘ, বেবিরুসাস। অত:পর এশিয়ার নদীবাহিত বন, দক্ষিণ আমেরিকার প্যাম্পাসের প্রাণী ও বার্মিজ পাহাড়ি এলাকার বড় বড় ডরষফ মধঁৎং ও ঊষফ’ং ফববৎ।

উল্লেখ্য প্রতিটি জোন বা সেকশানে পশুদের কাছে আমরা গার্ড দেখতে পাই। যে সকল দর্শনার্থী পায়ে হেঁটে নাইট সাফারি দেখতে চান তাদেরকে তারা পথ দেখাতে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও প্রাণিদের দেখভালের জন্য নিয়োজিত গার্ডগুলোর সাথে ঐ প্রাণিদের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক হওয়ার ফলে পশুগুলোকে নিয়ন্ত্রন করা তাদের পক্ষে সহজ হয়। প্রতিটি জায়গার ও পশুর নাম বড় প্ল্যাকার্ডে লেখা। প্রায় ৩০-৪০ মিনিট সময় ধরে আমরা ট্রামে চড়ে চাঁদনী আলোতে আকাঁবাকা পথ ধরে এই উন্মুক্ত নাইট সাফারী উপভোগ করি। ভাবছিলাম আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবেই এর চেয়ে অনেক সুন্দর জায়গা আছে। কিন্তু পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য তেমন কিছুই নেই।

ট্রাম সফরের শেষে ট্রামের কমেন্টেটর জানান এই নাইট সাফারি আপনাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই পৃথিবী তখনই সুন্দর হবে যখন আমরা এই সকল প্রাণীকে নিয়ে একসাথে বসবাস করবো। প্রাণীহত্যা ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে আজ অনেক প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অনেকগুলো বিলুপ্ত প্রায়। পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য ও ইকোসিস্টেম রক্ষার জন্য এই প্রাণিগুলোর গু শুরুত্ব¡ অপরিসীম। অতএব বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবীর জন্য আমরা যেন পরিবেশ ও প্রাণিগুলোর যত্ন নিই এবং পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাই। তাদের এই অসাধারণ উদ্যোগ ও উদ্দেশ্য আমাদেরকে মুগ্ধ করে ও সুন্দর পৃথিবীর জন্য প্রাণীগুলোর প্রয়োজনীয়তা আমরা উপলদ্ধি করি। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদেরও টিচার সহ শিক্ষাসফরে আসতে দেখেছি। প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে আমরা সাফারির উলু উলু ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে যার যার পছন্দমতে তৃপ্তি সহকারে আমাদের রাতের খাবার সেরে নিই।
আমরা গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষা করতে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যে নির্ধারিত স্থানে আমাদের গাড়ি ও ড্রাইভারের সন্ধান পাই। রাস্তার দু’পাশের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হোটেলে পৌছি এবং হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম নিই। কারণ পরের দিন আমরা সকালে আমরা

চায়না টাউন দেখতে যাবো এবং দুপুর-রাত অবধি ঝবহঃড়ংধ ওংষধহফ এ (রাত ১০টা পর্যন্ত) কাটাবো। আমাদের দলে পরদিন যোগ দেবেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক শ্রদ্ধেয় জিয়া উদ্দিন খালেদ চৌধুরী, ভাবী মিসেস ইসমত আরা বেগম ও তাদের একমাত্র কন্যা নাজনূর খালেদ চৌধুরী। সানতোষা দ্বীপের বর্ণনাতীত সৌন্দর্য্যের কিছু বর্ণনা পরবর্তী সংখ্যায় প্রদানের আশা রাখি । (চলবে)

আশফা খানম শিক্ষাবিদ, নারীউন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট