চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হৃদরোগ : প্রতিরোধই সর্বোত্তম উপায়

৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

‘আমার হার্ট, তোমার হার্ট, সুস্থ রাখতে অঙ্গীকার করি একসাথে’ প্রতিপাদ্যে গত রবিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব হার্ট দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশে গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশ ২০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতি বছরই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হৃদরোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবারও দেশের নানাস্থানে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচির একটাই লক্ষ্য। তা হচ্ছে, হৃদরোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। বহুমাত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব হার্ট দিবস পালনের ফলে হৃদরোগ ও সুস্থ হার্ট সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হবেন, সন্দেহ নেই। তবে, কাক্সিক্ষত ফল পেতে জনসচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচিসহ বছরব্যাপী নানামাত্রিক বাস্তবধর্মী উদ্যোগ থাকা জরুরি।

বর্তমান সময়ে সমগ্র বিশ্বে হৃদরোগ ও স্ট্রোক সবচেয়ে বড় ঘাতকব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত। প্রতিবছর বিশ্বে যত মানুষ মারা যায় তার ২৯ ভাগই হার্টের রোগী। হৃদরোগকে তাই বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অসংক্রামক রোগের ১২.৫ ভাগ মৃত্যু হয় হৃদরোগে, যার মধ্যে শতকরা ৮২ ভাগ মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের। কারণ এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল। সাধারণ কিংবা মধ্যবিত্ত রোগীর পক্ষে এ ব্যয় বহন করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে হৃদরোগে মৃত্যুর শিকার মানুষদের শতকরা ৮০ ভাগই স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশের। জোরালো প্রতিরোধ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিশ্বে হৃদরোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার চার থেকে পাঁচ ভাগই হৃদরোগ আক্রান্ত। এছাড়া এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ। দেশে রোগজনিত মৃত্যুর শতকরা ১৭ ভাগই হচ্ছে হৃদরোগের কারণে। এসংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এর মূল কারণ আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস এবং অসচেতনতা। হৃদরোগে আক্রান্তের ৬০ শতাংশই হচ্ছে তরুণ। যাদের বয়স ৪৫ বছরের কম। দেশে হৃদরোগের এই চিত্র খুবই উদ্বেগকর।
উল্লেখ্য, মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে হার্ট বা হৃৎপিন্ড। কিন্তু প্রয়োজনীয় সচেতনতা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার নেতিবাচক প্রভাবে এই হৃদপিন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগের ঝুঁকির ব্যাপারটি নির্ভর করে একজন মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করছে তার ওপর। অতিরিক্ত ধূমপান, শুয়ে-বসে সময় কাটানো, শরীর চর্চাহীন অলস জীবনযাপন ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে চর্বি জমা হয়ে ধমনিগুলো সরু হতে থাকে। হৃৎপিন্ডের রক্তনালিতে রক্ত চলার পথ বা ধমনির ভিতর রক্ত প্রবেশের পথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে হৃৎপিন্ডকে অক্সিজেন দিতে ব্যর্থ হলেই ঘটতে পারে হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল রোগ। আবার ঝুঁকিপূর্ণ কর্মস্থল এবং বিভিন্ন মানসিক চাপও হৃদপিন্ডকে অসুস্থ করে তুলে। তাই জীবনাচার হার্টবান্ধব করার পাশাপাশি দেশে সুস্থ হার্টবান্ধব সামাজিক ও কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করাও জরুরি।

আমরা মনে করি, রোগটির বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও উন্নত চিকিৎসাসেবাসহ নানা বিষয়ে সরকারের সুচিন্তিত পদক্ষেপ থাকা উচিত। কী কী কারণে রোগটি ছড়ায়, রোগটিতে আক্রান্ত হলে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং রোগটি নিয়ন্ত্রণে ওষুধ সেবনে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে প্রভৃতি বিষয় সাধারণ মানুষকে সচেতন করা গেলে কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। একইসঙ্গে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে থাকার পরিবেশও সৃষ্টি করতে হবে। টেনশনমুক্ত পরিবেশে কাজ করার ও জীবন-যাপনের সুযোগ অবারিত করতে হবে। নিশ্চয়তা থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবারের। ছোট মাছ, ফলমূল, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন দেশীয় খাবারের দিকে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। ফরমালিনসহ ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার, ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস, ফাস্টফুড-জাঙ্কফুড, ফ্রোজেন ফুড প্রভৃতির ক্ষতিকর দিক সাধারণ মানুষের সামনে নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। সুস্থ হার্টের জন্যে নিয়মিত হাঁটা জরুরি। এ জন্যে নাগরিকসাধারণের জন্যে হাঁটার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শিশুদের জন্যে ব্যবস্থা করতে হবে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও বিনোদনস্পট। নিশ্চিত করতে হবে ভেজালমুক্ত ও মানসম্পন্ন শিশুখাদ্য। শিশুস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় নিতে হবে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের আলোকে যৌক্তিক পদক্ষেপ। আমরা চাই হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির গতি থামিয়ে দিতে সরকারের বহুমাত্রিক কর্মসূচি। তবে শুধু কর্মসূচি প্রণয়ন করলেই কাক্সিক্ষত ফল আসবে না, বাস্তবায়নেও থাকতে হবে আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং একটি যৌক্তিক বাজেট। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, ব্যাক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমকেও পালন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট