চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ^ প্রবীণ দিবস চাই বয়স্কজনদের সুরক্ষায় সুচিন্তিত উদ্যোগ

১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৪ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস। প্রতিবছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। এ বছর ‘অ্যা জার্নি টু এজ ইক্যুয়ালিটি’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের মূল লক্ষ হচ্ছে সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধান ও তাদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। একইসঙ্গে সুন্দর সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে প্রবীণদের অবদানকে স্বীকার করার মাধ্যমে তাদের যথাযথ মর্যাদা দেয়াও এ দিবসের উদ্দেশ্য। সংগতকারণে দিবসটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব সীমাহীন।

জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ৬০ বছর বয়সী মানুষকে প্রবীণ হিসাবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সাধারণ মানুষের গড় আয়ুও। কারণ উন্নয়নের এই পথপরিক্রমায় জনগণের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময় মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছরের কিছু বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ চলতি বছরের জুনের হিসাব অনুযায়ী এখন গড় আয়ু ৭২.৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষের আয়ু ৭০ দশমিক ৮ বছর আর নারীর ৭৩ দশমিক ৮ বছর। ফলে পুরুষ অপেক্ষা নারীরা গড়ে তিন বছর বেশি বাঁচে। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ুর দিক হতে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম এবং সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে তৃতীয়। উপার্জন ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের নিমিত্ত নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিজনিত কারণেই এমনটি হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই একটা আনন্দের সংবাদ। উপার্জন বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্যমান এবং চিকিৎসাসেবা উন্নয়ন ও সহজলভ্য হওয়া অব্যাহত থাকলে গড় আয়ু বৃদ্ধির ধারাও অব্যাহত থাকবে, সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নিরসন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, অপুষ্টি হ্রাস, জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যেতে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। সে লক্ষে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাফল্যও আসছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ২৪ ভাগ অর্থাৎ চার কোটির কম জনগণ বা কম-বেশি ৮০ লাখ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করার কৌশলপত্রও প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ। দরিদ্র দেশের কাতার থেকে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে আমাদের সব নাগরিকের ভূমিকা রয়েছে। অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। উন্নত বিশ্বের কাতারে স্থান করে নিতেও প্রণীত হয়েছে রূপকল্প-২০৪১। আর এ লক্ষ্য পূরণে যুবগোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রবীণ জনগোষ্ঠীও পালন করে যাচ্ছে মুখ্য ভূমিকা। গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্কজনদের সংখ্যা বাড়লে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে তারাও নানা ভাবে অবদান রাখাতে পারবেন। এটা অবশ্যই একটি প্রীতিকর বিষয়। তবে, বয়স্কজনদের সুষ্ঠু ভরণপোষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিনোদন-সুবিধা অবারিত করতে না পারলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হবে।

অত্যধিক জনঘনত্বপূর্ণ এই দেশ এখনো মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে ওঠার জন্য সংগ্রাম করছে। কর্মসংস্থানের অভাব অত্যন্ত প্রকট। প্রতি বছর অনেকটা জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। এই অবস্থায় মানুষের গড় আয়ু ক্রমান্বয়ে বাড়ার ফলে একপর্যায়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। সেই পরিস্থিতি আমরা কীভাবে সামাল দেব, তা নিয়ে ভাবতে হবে এখনই। বয়স্ক জনগোষ্ঠী যাতে জাতীয় অর্থনীতির জন্য বোঝাস্বরূপ না হয়, সে জন্য এখনই সুদূরপ্রসারী নীতি-পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরও বয়স্ক, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনগোষ্ঠীর উৎপাদনক্ষমতা থেকে যায়। এই শ্রমসম্পদের সদ্ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নতুন নতুন উৎপাদন খাত সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি, সেবা খাতের বিপুল বিকাশ সহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্যে যৌক্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সুস্থ-সুন্দর, নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের কল্যাণে তাঁরাও সব কিছু উজাড় করে দিতে পারবেন। তাঁদের অবদান যুক্ত হলে দেশ দ্রুত উন্নতি ও সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছতে পারবে। তাই তারা পরিবার-পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা না হয়ে, যাতে এগিয়ে চলার ধারায় আলোর মশাল হাতে থাকতে পারেন, সে লক্ষ্যে থাকতে হবে সুচিন্তিত উদ্যোগ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট