চট্টগ্রাম রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪

চট্টগ্রাম আন্দোলনের পুরোধা আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী

আবছার উদ্দিন অলি

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক পূর্বকোণ এর চেয়ারম্যান ইউসুফ চৌধুরীর জন্য চট্টগ্রাম ধন্য। চট্টগ্রামে রাউজানের ঢেউয়া হাজী পাড়া গ্রামে ১৯২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন ইউসুফ চৌধুরী। চট্টলগৌরব ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামবাসীর অনুপ্রেরণা, গর্ব ও সাহস। আমৃত্যু যার স্বপ্ন ছিল আধুনিক চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে আজ যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে তাঁর পেছনের নেপথ্যে নায়ক ছিলেন ইউসুফ চৌধুরী। তিনি প্রতিটি কাজে চট্টগ্রামবাসীর সাথে ছিলেন। সুখে-দুঃখে চট্টগ্রামবাসী তাঁকে সবসময় পেয়েছেন। যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে দুঃসময়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন যা চট্টগ্রামবাসীর ন্যায্য দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এনে দিয়েছেন। চট্টগ্রামবাসী পেয়েছেন অনেক মর্যাদা অনেক সম্মান।

ইউসুফ চৌধুরী চট্টগ্রামবাসীর কাছে প্রিয় ও পরিচিত নাম। যাকে বলা যায় চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংগ্রামের বটবৃক্ষ। যথাযথ মর্যাদায় নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে এই মহান মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী দৈনিক পূর্বকোণের যাত্রা। তারও আগে থেকে চট্টগ্রামের যে কোন সমস্যায় ইউসুফ চৌধুরী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর চিন্তা চেতনায়, আদর্শে একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষের পরিপূর্ণ প্রতিকৃতি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি সততা সাহস আর ন্যায় নীতিতে সর্বদা অটল ছিলেন। কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। তিনি তাঁর সৎকর্মের জন্য আমাদের মাঝে এখনো বেঁচে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল। মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী ছিলেন কর্মিষ্ঠ ও প্রতীক-পুরুষ চট্টগ্রামের। উন্নয়ন-বঞ্চিত এই জনপদের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি ছিলেন অকুতোভয় এক সংগ্রামী। তাই কালের নিয়মে তিনি ‘চট্টলদরদী’ কিংবা ‘সম্পূর্ণ-মানুষ’ রূপে আমাদের কাছে প্রতিভাত হয়েছেন। সব ধরনের প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য শক্তি তাঁকে শিখর-স্পর্শী সাফল্য এনে দিয়েছিল। তিনি নব-প্রযুক্তির মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠা, সেরা আঞ্চলিক দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশ, ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ, বিশুদ্ধ পানির আন্দোলন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন।

তৃণমূল থেকে উঠে এসে তিনি পর্যায়ক্রমে সমাজ রূপান্তরের কারিগর হয়ে ওঠেন। এই মহান পুরুষের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। দৈনিক পূর্বকোণে বিভিন্ন সংগঠনের সভা, সমাবেশ সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক, সর্বোপরি পত্রিকায় লেখনির মাধ্যমে সচেতন করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জোরালো ভূমিকা রেখেছেন চট্টগ্রামের গণমানুষের মূখপাত্র হিসেবে। ইউসুফ চৌধুরী যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন চট্টগ্রামবাসীর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর কর্ম তাঁর স্বপ্ন আমাদের চলার পথের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ইউসুফ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল আধুনিক চট্টগ্রাম, উন্নত চট্টগ্রাম, একটি পরিপূর্ণ চট্টগ্রাম, পরিচ্ছন্ন সুন্দর চট্টগ্রাম। তিনি যে স্বপ্ন দেখে গেছেন তার যোগ্য উত্তরসূরীরা সেই ধারাবাহিকতায় সময়ের সাথে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি আমাদের সকলের প্রিয় ইউসুফ চৌধুরীকে। শুভ কামনা রইলো দৈনিক পূর্বকোণের জন্য। পূর্বকোণ জন্ম বলে যাক মানুষের কথা, গেয়ে যাক মানুষের গান। ইউসুফ চৌধুরীর এতদঅঞ্চলের লাখো মানুষের হয়ে আছেন প্রাণ। মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সংবাদপত্র শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদান রাখেন। ১৯৮৬ সালে তিনি আধুনিক সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশ করেন। পূর্বকোণ তাঁকে নিয়ে আসে কর্মজগতের এক নতুন অধ্যায়ে। ১৯৯২ সাল থেকেই ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম এসোসিয়েশনের আমৃত্যু সভাপতিও ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামবাসীকে ভালোবাসতেন বলেই তাঁর কাছে এই অঞ্চলের সমস্যা গুরুত্ব পেয়েছে।

চট্টগ্রামবাসীর মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে তিনি আপোষ করেননি। তবে একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, চট্টলগৌরব ইউসুফ চৌধুরীর জন্ম ও মৃত্যু দুটোই এই সেপ্টেম্বর মাসে। আধুনিক সংবাদপত্রের পথিকৃৎ দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২ টায় পবিত্র মক্কা নগরীর জিয়াদ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ফজরের নামাজের পর মসজিদুল হারামে নামাজে জানাজা শেষে সকাল ৯টায় মক্কার সরায়ে মকবরায় তাঁকে দাফন করা হয়। চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী পবিত্র ওমরা পালনের জন্য ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মক্কা গমন করেন। মক্কায় পৌঁছার পরদিন সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিকেলে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে জিয়াদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। অমর হোক তাঁর সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল, মননশীল সকল কর্ম।

লেখক ঃ সাংবাদিক ও গীতিকার

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট