চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাউজান আওয়ামী রাজনীতির পথ-পরিক্রমা

সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৪ পূর্বাহ্ণ

রাউজান উপজেলায় আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ত্যাগ, সংগ্রামে যতটুকু সমৃদ্ধ হয়েছে ততটা সমৃদ্ধ আদর্শ চর্চায়। যেখানে বহু নেতাকর্মী আদর্শের প্রশ্নে আপোস না করায় জীবন দিয়েছেন, সহায়-সম্পত্তি হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও ছিল বেশি। তাই রাজনীতিতে আদর্শ চর্চাও হতো বেশি। সে আদর্শ বুকে ধারণ ও লালন করে অনেকেই নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, অনেকে ঠাঁই করে নিয়েছেন নেতাকর্মীদের অন্তরে। তাদেরই একজন আমার বাবা মরহুম আলহাজ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবী।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর আহবানে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক মুহাম্মদ খালেদ এর হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন তিনি। পরবর্তীতে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন, সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময়। ১৯৯১-২০১৭ সাল, পরপর ৩টি সম্মেলন। অথচ রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের পথচলা ছিলো কন্টকময়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিষাক্ত ছোবল কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর প্রাণ। যেখানে বঙ্গবন্ধুর কথা বলা, প্রগতির কথা বলা ছিল একজন কর্মীর জন্য দুঃসাহসের ব্যাপার!

১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন যুগান্তকারী, বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জননেতা এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে রাউজান আসনে মনোনয়ন দেন। তখন চট্টগ্রামের রাজনীতির দুই অভিভাবক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরামর্শে আমার বাবা নেত্রীর মনোনীত প্রার্থীকে সাদরে গ্রহণ করে নেন এবং নির্বাচনে বিজয় অর্জনে প্রাণপন প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু নানা কারণে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তবে তিনি থেমে থাকেননি, শুরু করেন তার উন্নয়নমুখী রাজনীতি। রাউজানের প্রতিটি রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বাস্তবায়ন করেন শতশত কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। ফলশ্রুুতিতে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাউজানের আসনটি উপহার দেন তিনি। সৃজনশীলতা, কর্মস্পৃহা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও উন্নয়নমুখী রাজনীতির মূল্যায়ন স্বরূপ জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতেই ৬ বার মনোনয়ন দিয়েছেন তাঁকে। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬ (স্থগিত), ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সাল মোট ৬ বার প্রাপ্ত মনোনয়নে টানা ৪ বার জয়লাভের মধ্য দিয়ে নেত্রীর মূল্যায়নকে সঠিক প্রমাণিত করেছেন তিনি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শয্যাশায়ী থাকা অবস্থায় আমার বাবা ওনাকে দেখতে গেলে আবেগাপ্লুত হয়ে নেতাকে বলেন আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আমরা আপনার কাছে ঋণী। কারণ আপনি রাউজানের সংসদীয় আসনটি একবার উপহার দিয়ে আমাদেরকে আজীবনের জন্য ঋণী করে রেখেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ২৭ বছরে আমরা আর রাউজানের আসনে জয়লাভ করতে পারিনি। প্রতি উত্তরে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ বলেন, না! বরং আমিই তোমাদের প্রতি ঋণী; কারণ তোমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে আমাকে নির্বাচনে জয়ী করেছ।

বাবার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০০১ সালে যখন রাউজান সংসদীয় আসনে জননেতা এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী প্রথমবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস হিসেবে পরিচিত সুবর্ণা প্রিন্টার্সের সামনে নির্বাচনী বিজয় মিছিল পরবর্তী হাজারো জনতার সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে বাবা বলেন, আজ আমার দীর্ঘদিনের স্বাদ পূর্ণ হয়েছে। দীর্ঘ ৩০ বছর পূর্বে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সাহেব নৌকাকে বিজয়ী করে গিয়েছেন। আজ ৩০ বছর পর আবার এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী নৌকার বিজয় উপহার দিয়ে রাউজান আওয়ামী পরিবারকে পুনরায় ঋণী করলেন।

রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি’র নেতৃত্বে এখন সুসংগঠিত। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সদর এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ১৪ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে মোট ১৬টি দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। যা সারাদেশে নজির স্থাপন করে। এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী’র প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রায় ১১শ’ ব্যাগ রক্তদান, প্রায় লক্ষ মানুষের জন্য মেজবান আয়োজন, রাউজানের ৭০০ মসজিদে খতমে কুরআন মাহফিল উদযাপন ও অসংখ্য মন্দিরে শোক প্রার্থনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দিয়ে আসা রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের মৃত্যুবরণকারী নেতৃবৃন্দের ছবি দলীয় কার্যালয়ে প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাদের স্মরণ করা হয়। প্রতি বছর রমজান মাসে মরহুম নেতৃবৃন্দের স্মরণে মরহুমের নিজ নিজ এলাকায় খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রাউজানে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৈনিক ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। একদিনে সাড়ে চার লক্ষ ফলদ বৃক্ষের চারা রোপন করে নজির স্থাপন করেন।

২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেন, রাউজানের সকল শিক্ষা ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ এবং ফুল বাগান সৃজন করে দৃষ্টিনন্দন করে তোলেন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে গ্যালারিসহ খেলার মাঠ নির্মাণ করেন, রাউজানের উত্তরে ও দক্ষিণে পিংক সিটি নামক দুটি আবাসন প্রকল্প স্থাপন করেন।

লেখক : কার্যনির্বাহী সদস্য, রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট