চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

অস্থির পেঁয়াজের বাজার বিকল্প ব্যবস্থা নিন

২৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

দেশে পেঁয়াজের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজ। ভারতের বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফাশিকারী সিন্ডিকেটগুলো ভোক্তাসাধারণের পকেট কাটছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর বেড়ে গেছে দেশি পেঁয়াজের দামও। লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দামের। কেনো যাচ্ছে না, তার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যাও নেই। লাফিয়ে লাফিয়েই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) প্রতিবেদন বলছে, মাত্র গত সাত দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজে বেড়েছে ১৫ টাকা। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যটির দামের যুক্তিহীন উল্লম্ফন সাধারণ মানুষদের জীবনে দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়িয়ে দেবে, সন্দেহ নেই।

বাজারে এখন প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এখন বাজারে এমন কোনো পণ্য খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার দাম বাড়েনি। চাল-ডাল থেকে শুরু করে শাকসবজি পর্যন্ত প্রতিটি জিনিসের দামই আকাশছোঁয়া। নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পেঁয়াজের দাম এতোদিন মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যেগুলোতে বন্যা ও পরিবহন ধর্মঘটের সুযোগে মুনাফালোভী চক্রগুলো যুক্তিহীন দাম বাড়াচ্ছে পণ্যটির। বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। তবে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, আমদানি কম হওয়ার সুযোগ নিয়ে পাইকাররা কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে জুলাইয়ের শুরুতে দেশে হু হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। সেসময় এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। তখন ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রণোদনা তুলে নেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে আসে। এখন আবার হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।টিসিবির পর্যবেক্ষণ বলছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এদিকে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের দেশে সৃষ্ট বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে পেঁয়াজ সরবরাহ সংকটের কথা উল্লেখ করে নতুন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির রপ্তানিমূল্য আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।

দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। বলা হচ্ছে, দেশি মজুদ পেঁয়াজ এখন কৃষকদের ঘরে নেই। থাকলেও তা সীমিত। এ কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। দেশে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের মূল অংশ ভারত থেকে আসে। ভারতে দাম বাড়ছে। এ কারণে দেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কিন্তু হাঁড়ির খবর রাখেন এমন অনেকেই বলছেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর জন্য একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে উচ্চমূল্যের জন্যে মজুদ করে রাখছে। অসাধু ও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ী কৌশলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। সরকারি মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে মুনাফালোভীরা তাদের কুইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে বাজারে। মুনাফাশিকারিদের লাগাম টেনে ধরতে দ্রুত জোরালো উদ্যোগ না নিলে মুনাফাশিকারিরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য, রান্নার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালি রান্নার কথা ভাবতেও পারে না। কৃষিভিত্তিক এ পণ্যটি ছাড়া শাক-সবজি, মাছ-মাংস, তরি-তরকারি- এক কথায় রান্নাবান্না একেবারে অচল। এ কারণে যুগ যুগ ধরে ধনী-গরিব সবার ঘরে পেঁয়াজের চাহিদা সমান। তাই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটার বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকেই বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে। অযৌক্তিক মুনাফাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি ও বিক্রি, বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানো, বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন, ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানা পদক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বছরব্যাপী চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুপাতে মজুদ, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভারতের পাশাপাশি চীন, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মিসর, ইরান ও নেদারল্যান্ডসসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতেও মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সব বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আমরা মনে করি, সরকারকে বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট