চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন

নয়ন চৌধুরী

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:০২ পূর্বাহ্ণ

পুষ্টি বিষয়ে জনসচতেনতা সৃষ্টি ও পুষ্টি উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি দেশব্যাপী পালিত হয় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২০১৯। জনগণের খাদ্যাভাস ও খাদ্য পরিকল্পনায় পুষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ার লক্ষ্যে এবছর পুষ্টি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন”।স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়েরে উদ্যোগে এ পুষ্টি সপ্তাহ পালিত হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “জাতীয় পুষ্টি নীতি ২০১৫”কে অনুসরণ করে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬-২০২৫) পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে ভ্রুণ অবস্থা থেকে শুরু করে শিশুর ২৩ মাস বয়স পযর্ন্ত শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, শারীরিক মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। প্রাক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের অপুষ্টির বিষয়টিও এই জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ।
দেশের সবচেয়ে দুস্থ ও ঝুকিঁপূর্ণ মানুষ যাদের দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে, যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এবং যারা অতি প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে তাদের ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে । এছাড়াও যক্ষ্মা, এইচআইভি ও এইডস রোগী এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত অন্যান্য জনগোষ্ঠীও অগ্রাধিকার পাবে। ২০২৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টি হ্রাস করতে “জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫” ও অন্যান্য নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসরণ করে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় (২০১৬-২০২৫) কয়েকটি সূচক ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিশুর জন্মের পর প্রথম এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৮০% এ উন্নীত করা, ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখার হার ৯৫% করা, ৬-২৩ মাস বয়সী শিশুদের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য খাবার গ্রহণের হার বাড়িয়ে ৪০% এর বেশী করা, কম জন্ম ওজনের হার কমিয়ে ১৬% করা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে কৃশকায়তার হার কমিয়ে ৮% করা,৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে কম ওজনের হার কমিয়ে ১৫% করা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মারাত্মক তীব্র অপুষ্টির হার কমিয়ে ১% এর নিচে আনা।
জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত “টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (ঝউএ) ২০৩০” এজেন্ডার মধ্যে ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ওজন পরিবীক্ষণ ও কাউন্সেলিং-এর জন্য গ্রোথ মনিটরিং এন্ড প্রোমোশন কার্ড (জিএমপি) কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। মারাত্মক অপুষ্টি শিশুদের জন্য ২০২টি জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইএমসিআই ও পুষ্টি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। একই সময়ে মহিলাদের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ৪৮ কোটি আয়রন ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। শাক-সবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও তেলবীজের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি খাদ্য বিতরনে অনুপুষ্টি সমৃদ্ধ চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষের ধারণা পুষ্টিকর খাবার খেতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। আর বেশি টাকা ছাড়া ভালো ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া না। এ ধারণাটি একেবারেই ভুল। কারণ পুষ্টিকর কোনো খাবার খেতে কোনো বাড়তি অর্থ খরচের প্রয়োজন হয় না। আপনি সারাদিন যে খাবারগুলো খাচ্ছেন সে খাবারগুলো পুষ্টিমান বিবেচনা করে খান এবং একটু ভেবে চিন্তে প্রতিদিনের খাবার তালিকাটি তৈরি করুন । তবেই দেখবেন আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো পাচ্ছে। তবে, জেনে নেয়া যাক আমাদের হাতের কাছে থাকা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার, যা বাড়তি অর্থ খরচ না করেই আমরা প্রতিদিনের তালিকায় রাখতে পারি –
১. প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবজি জাতীয় খাবার রাখুন। কারণ আমাদের শরীরে ভিটামিন ও মিনারেলের জোগান দেয় সবজি।
২. প্রতিদিনের খাবারে অন্তত একটি দেশীয় ফল রাখুন। ফলে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। আর দেশি ফলের দামও বেশি নয়।
৩. ভাতের সাথে সবজি ও ডাল জাতীয় উপাদান বেশি খান। ভাতের সঙ্গে লেবু খান। লেবুর দামও কম। আবার শরীরে প্রযোজনীয় ভিটামিন সি-এর জোগানও দেবে।
৪. তিন বেলা খাবারের এক সময় অন্তত ডিম বা মাছ-মাংস রাখুন। এটি প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে।
৫. প্রতিদিন পারলে অন্তত দু’টি করে কলা খান। কারণ কলায় থাকা উপাদান আপনাকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচবে। কলা দেশি ফল। বিভিন্ন জাতের কলা সারা বছরই পাওয়া যায়।
৬. তিন বেলার মধ্যে একবেলা অন্তত দুধ জাতীয় খাবার খান।
৭. দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করুন।
৮. আর বাইরের ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, কোমল পানীয় কম খান। এই খাবার কমে গেলে অর্থও সাশ্রয় হবে। আবার, খারাপ উপাদানগুলো আপনার শরীরে ক্ষতি করবে না।
খাবারে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি সুস্থ থাকতে আপনার জীবনযাপনে কিছুটা পরিবর্তন আনুন। পর্যাপ্ত ঘুমান ও প্রতিদিন নিয়ম মেনে কিছু ব্যায়াম করুন। কম খরচে এভাবেই সুস্থ থেকে বেশি দিন বাঁচুন।

লেখক ঃ সিএইচসিপি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট