চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আপাদমস্তক নাটকের মানুষ অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমেদ

১১ জুন, ২০১৯ | ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

তিনি ছিলেন অগ্রণী নাট্যজন। আপাদমস্তক নাটকের মানুষ। বাংলা শিল্প ও সাহিত্যের নিষ্ঠাবান শিক্ষকের সজীব প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি। চলনে-বলনে, আচরণে, অভিব্যক্তিতে শিল্প, সাহিত্য, নাট্যচর্চাকে করেছিলেন যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ বা ‘পার্ট অব লাইফ’।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত রূপে ‘এক অঙ্কের নাটক’ লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন সদ্য প্রয়াত মমতাজউদদীন আহমদ (১৮ জানুয়ারি ১৯৩৫ -২ জুন ২০১৯)।
জাতীয় পরিসরে আলোচিত হলেও তার জীবন ও কর্মের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল চট্টগ্রাম। ৩২ বছরের বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে শিক্ষাদান করেছেন তিনি, যার সূচনা ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজে। পুরো ষাট ও সত্তর দশক তিনি মাতিয়ে ছিলেন পাহাড় ও সমুদ্রস্পর্শী চট্টগ্রাম শহরের নাট্যাঙ্গন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তখন সবে জন্ম নিচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম কলেজই শিল্প-সাহিত্য-নাট্য আন্দোলনের সূতিকাগার। তিনি নগরের তরুণদের নিয়ে নাটকের অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কাজ করেন, যাতে ছিল তৎকালের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতার চৈতন্যময়তা। চট্টগ্রামে নাট্য তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি মিশে আছেন অনিবার্যভাবে।
পরবর্তীতে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। যুক্ত থাকেন নাটক রচনা ও অভিনয়ে। মূলত টিভিতে অংশগ্রহণ করলেও কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়শৈলীর প্রকাশ ঘটিয়েছেন। স্বকীয় কৃতিত্বে জাতীয় স্তরে পুরস্কৃতও হয়েছেন তিনি।
তার লেখা নাটক ‘কি বলিতে চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ ভারতেও পাঠ্য হয়েছে। তার রচনা সম্ভার বিপুল। তার গবেষণা পুস্তক বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত, বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত, প্রসঙ্গ বাংলাদেশ, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
তার রচিত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হৃদয় ঘটিত ব্যাপার-স্যাপার, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা, প্রেম বিবাহ সুটকেশ, জমিদার দর্পণ, ক্ষত বিক্ষত, রঙ্গপঞ্চাদশ, বকুল পুরের স্বাধীনতা, সাতঘাটের কানাকড়ি, রাক্ষসী। এছাড়াও তিনি রচনা করেছেন ভিন্ন স্বাদের কয়েকটি জনপ্রিয় গ্রন্থ, যার মধ্যে রয়েছে চার্লি চ্যাপেলিনের জীবনী।
ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত বাংলার উত্তর প্রান্তীয় জেলা মালদহে জন্ম নেওয়া মমতাজউদদীন আহমদ পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে এসে শৈশব কাটান বৃহত্তর রাজশাহীতে। কাজের সূত্রে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বসবাসকালে এদেশের নাট্যচর্চায় পালন করেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ৮৪ বছরের জীবনের পরিসমাপ্তিতে তিনি ‘আপাদমস্তক নাটকের মানুষ’ হিসাবে রেখে গেছেন তার উজ্জ্বলতর পরিচিতি।

লেখক : কবি, শিক্ষাবিদ, কথাশিল্পী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট