চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

আরাফাতে অবস্থান বলতে হজ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

১০ জুন, ২০১৯ | ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

হজ্বের ৩ ফরজ। যথাঃ (১) হজ্বের উদ্দেশ্য এহরাম পরিধান করা। (২) ৯ জিলহজ্ব আরাফাতে অবস্থান করা। (৩) ১০ থেকে ১২ জিলহজ্বের মধ্যে কাবা শরীফ তাওয়াফ করা।
আরাফাত মক্কা মোকাররমা প্রায় ১৫/১৬ কি.মি দক্ষিণে এক বিশাল ময়দান। এই বালিময় ময়দানের পূর্ব-দক্ষিণ পার্শ্বে জব্লে রহমতের অবস্থান। আরাফাতের অনেক স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস রয়েছে। আরাফাত অর্থ পরিচয় তথা মিলনক্ষেত্র। বাবা আদম ও মা হওয়া পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার পর তাঁদের মিলন হয় এই আরাফাতেই। আল্লাহর রসূল (স.) বিদায় হজ্বের ভাষণও এই আরাফাত ময়দানে দিয়েছিলেন।
আরাফাতে আছে এক মাত্র মসজিদ, নাম মসজিদে নমেরা। সৌদি সরকার এই মসজিদকে আরও আধুনিক ও সম্প্রসারণ করেছে। সাবেক মসজিদ আরাফাতের উত্তর সীমানা বরাবরে অবস্থিত ছিল। সৌদি সরকার কর্তৃক এই মসজিদ সম্প্রসারণের ফলে উত্তরাংশের বর্ধিত অংশটি আরাফাত সীমানার বাইরে পড়ে যায়। অর্থাৎ নমেরার উত্তরাংশের প্রায় এক চতুর্থাংশ আরাফাতের বাইরে।
হজ্বের তিন ফরজের মধ্যে ৯ জিলহজ্ব সূর্য পশ্চিমে হেলার পর আরাফাতে অবস্থান একটি, যাকে আরবীতে ওয়াকুফে আরাফাত বলে এবং তা বাধ্যতামূলক। যার কোন বিকল্প কাফফারা কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন মূমূর্ষ রোগী আরাফাতের বাইরে থাকলে তাকে ৯ জিলহজ্ব সূর্য পশ্চিম দিকে হেলার পর এ্যম্বুলেন্স বা যে কোন প্রকারে আরাফাতে পৌঁছাতে না পারলে বা আরাফাত ময়দান ঘুরায়ে নিতে না পারলে তার হজ্ব হল না।
সাধারণতঃ হাজীগণ হজ্ব উপলক্ষে মক্কা মোকাররমায় এসে সমবেত হন। ৮ থেকে ১২জিলহজ্ব এই পাঁচ দিনের হজ্বের কার্যক্রম নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধান করতে হয় হজ্বযাত্রীগণকে। ৮ জিলহজ্বের আগ পর্যন্ত বর্হিবিশ্ব¦ থেকে ১৫/২০ লক্ষ হজ্বযাত্রী মক্কা মোকাররমায় একত্রিত হওয়ার কারণে সৌদি সরকার ও মোয়াল্লেমগণের তৎপরতা,ব্যস্ততা ধারণার বাইরে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
৮ জিলহজ্ব মিনায় অবস্থান করা সুন্নাতে মোয়াক্কাদা। সৌদি সরকার মোয়াল্লেমগণের সহায়তায় হজ্বযাত্রীগণকে মিনায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে। তখন সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমস্ত বাস হজ্ব উপলক্ষে নিয়োজিত করে থাকে। মক্কা মোকাররমা, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা মাত্র ১৬ বর্গ কিলোমিটার এরিয়ার মধ্যে হজ্ব। এতে রাস্তায় কত শত বাসের সংকুলান হবে তারও সীমা আছে। ফলে মোয়াল্লেমগণ পাঁচদিন ব্যাপী হজ্ব কার্যক্রমে হাজীগণকে বাসের ট্রিপ দিতে বাধ্য হন এবং বাসের সল্পতা হেতু হজ্বের তরতীবে কিছুটা অসুবিধা হয়ে থাকে। মিনা থেকে ৯ জিলহজ্ব হজ্বের প্রধান দিবসে হাজীগণ আরাফাতে গিয়ে সমবেত হন।
সৌদি সরকার হাজীগণকে রৌদ্রের তাপ থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রায় ২০/২৫ বছর আগে আরাফাত ময়দানে প্রচুর নিম গাছ রোপণ করেছে। মোয়াল্লেমগণ হাজীগণের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা এবং দুপুরে খাবার সরবরাহ করে থাকে।
৮ জিলহজ্ব দিবাগত রাত থেকে আরাফাতে হাজীগণের সমাগম শুরু হয় এবং তা ৯ জিলহজ্ব দুপুর পর্যন্ত চলে। ঐ দিন এহরাম ব্যতীত কোন হজ্বযাত্রী থাকবে না। এহরামবিহীন কাউকে চোখে পড়লে বুঝতে হবে তিনি হজ্ব করছেন না, তবে হাজীগণের সেবামূলক দায়িত্বে আছেন। আরাফাতে পৌঁছে সম্ভব হলে ৯ জিলহজ্বের প্রথমার্ধে গোসল করে নিবেন। যেহেতু ঐদিন আরাফাতে গোসল করা সুন্নত।
আরাফাত ময়দানে যোহর আছর দুই ওয়াক্ত নামাজ একত্রে পড়তে হবে। সূর্য অস্তের পর আরাফাত থেকে রওনা হয়ে প্রায় ৫/৬ কি.মি দূরে মুজদালেফায় গিয়ে এশার ওয়াক্তে এক আজানে দুই একামতে মাগরিব ও এশা পর পর পড়তে হয়।
মিনা থেকে আরাফাত পৌঁছে সকাল ৯/১০ টার পূর্বে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যোহর, আছর নামাজ নিজ তাঁবুতে পড়বেন না মসজিদে নমেরাতে যাবেন। উল্লেখ্য সকাল ১০ টার পর এই মসজিদে জায়গা পাওয়াত দূরের কথা প্রবেশ করারও সুযোগ থাকে না।
বছরের এই দিন অর্থাৎ হজ্বের দিন আরাফাতের এই একমাত্র মসজিদে নমেরাতে সূর্য পশ্চিম আকাশে প্রবেশের সাথে সাথে পর পর যোহর আছর নামাজ পড়া হয়, যা মুসলিম বিশ্বের টিভি কেন্দ্রগুলি সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে।
অর্থাৎ ঐ দিন প্রায় ২৪ লক্ষ লোক আরাফাতে সমবেত থাকেন। আর মসজিদে নমেরার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৬০/৭০ হাজার লোকের হবে মনে হয়। মসজিদের বাইরেও প্রচুর লোক নামাজে শরীক হয়ে থাকেন। কাজেই এই জামাতে আমার ধারণা মতে ৩/৪ লক্ষ লোক যোহর আছর নামাজ পড়ে থাকেন। বাকী সবাই যার যার মতে যোহর ওয়াক্তে যোহর আছর ওয়াক্তে আছর নামাজ পড়েন।
মসজিদে নমেরাতে সূর্য পশ্চিমাকাশে পদার্পণের সাথে সাথে বাদশাহ বা তাঁর প্রতিনিধি ইমাম সাহেব প্রথমে দীর্ঘ খোতবা দিবেন। তারপর মোয়াজ্জিন সাহেব আজান দিবেন এবং পর পর যোহরের জামাতের জন্য একামত বলবেন। এই জামাতে মুসল্লীগণ এদিন যোহর আছর উভয় ওয়াক্তের কোন সুন্নত পড়েন না এবং উভয় জামাত কছর হিসাবে দুই রাকাত করে পড়া হয়। অনুরূপভাবে ইমাম সাহেব দুই রাকাত যোহরের ফরজ নামাজ পড়াবেন। যোহরের নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে মোয়াজ্জিন সাহেব আছরের জামাতের জন্য আজান ছাড়া শুধু একামত বলবেন এবং ইমাম সাহেব দুই রাকাত আছরের ফরজ নামাজ পড়াবেন।
অকুফে আরাফাত বা আরাফাতে অবস্থানকালে যোহর আছরের নামাজ পড়া, পছন্দ মত দোয়া দরূদ পড়া ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা হাজীগনের কর্তব্য। আরাফাত দোয়া কবুলের অন্যতম স্থান। মানুষের এমন কতেক পাপ আছে যাহা আরাফাতের ময়দানে হজ্বের দিন না দাঁড়ালে বিদূরিত হয় না। ঐদিন তথায় উপস্থিত হজ্ব যাত্রীগণের উপর আল্লাহ তায়ালার এত অধিক রহমত অবতীর্ণ হয় যে, এটি দেখে শয়তান একেবারে হতাশ ও নিরুদ্যম হয়ে পড়ে।
আরাফাতে অবস্থান ব্যতীত শরীয়ত নির্দেশিত বিশেষ কোন কাজ নেই। তবে আরাফাতের অবস্থান জবলে রহমতের নিকটে করতে পারাটা আফজল বা উত্তম। আপনার শারীরিক অবস্থা ও আরাফাতে আপনার তাঁবু জবলে রহমত হতে কত দূরে এই সব কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি জবলে রহমতে যাবেন কিনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট