চট্টগ্রাম রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

শুলকবহরে লেগে থাকে গাড়ির বহর
সেতু নির্মাণের কাজ চলায় সিডিএ এভিনিউ সড়কের শুলকবহর অংশে লেগে থাকছে যানজট

শুলকবহরে লেগে থাকে গাড়ির বহর

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ জুলাই, ২০২৫ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে মুরাদপুরের দিকে কিছুদূর এগোতেই থেমে যায় গাড়ির চাকা। সামনে সারি সারি গাড়ি চলছে কচ্চপ গতিতে। শুলকবহরের প্রায় আধাকিলোমিটার সড়কজুড়ে গাড়ির বহর লেগে থাকার এই চিত্র দেখা যায় প্রতিদিন-সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।

 

প্রায় একবছর ধরে বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নগরীর সিডিএ এভিনিউ হিসেবে পরিচিত অন্যতম প্রধান সড়কটির শুলকবহর অংশে যানজটের ভোগান্তিতে আছেন মানুষজন। বিশেষ করে অফিস সময় ও স্কুল ছুটির পর যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। এই সময়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা হয়ে উঠে দুরূহ।

 

শুলকবহরের দুদিকে ফ্লাইওভারে উঠানামার সংযোগমুখ। এ কারণে উভয় দিক থেকেই গাড়ির চাপ পড়ে এই জায়গায়, যা যানজটের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। যানজটপ্রবণ সেই শুলকবহরে এখন যুক্ত হয়েছে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ। এই কাজের কারণে সড়কটি একেবারেই সরু হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে শুলকবহর এলাকায় মূল সড়কের পাশ ধরে চশমাখাল ও মির্জাখালে সড়ক কেটে দুটি খালকে সংযুক্ত করতে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। আগে এখানে কালভার্ট থাকলেও সেটি নিচু হওয়ায় পানি চলাচল ব্যাহত হতো। মূলত সহজে যাতে দুই খাল দিয়ে এ এলাকার পানি নেমে যেতে পারে সেজন্য সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতু নির্মাণের কাজের জন্য শুলকবহর এলাকার উত্তরপাশের লেনে টিনঘেরা দিয়ে কাজ চলছে। অর্ধেকের বেশি অংশজুড়ে ওই কাজ চলায় সড়কটি সরু হয়ে গেছে। একই কারণে দক্ষিণ পাশের লেনটিও সরু করতে হয়েছে। এ কারণেই মূলত যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

 

এছাড়া খালের দুই পাশে রিটেইনিং ওয়ালও দেয়াল নির্মাণে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীও সড়কে রাখা হয়েছে। এর ওপর সড়কটির বেশিরভাগ জায়গায় খানাখন্দে ভরে গেছে। আবার সড়কের ফুটপাতের পাশের অংশে এখনো পিচ না পড়ায়, পুরো সড়ক ব্যবহারও করা যাচ্ছে না। এটিও যানবাহনের গতি ধীর হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না তা শুধু নয়, সড়কের দুই পাশের ফুটপাতগুলো প্রস্তুত না হওয়া, অবৈধভাবে দোকান বসানোয় পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই।

 

এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন টেম্পোজাতীয় মাহেন্দ্রা গাড়ি চালান সাহাব উদ্দিন। জানতে চাইলে এই চালক বলেন, প্রতিদিন শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে ওয়াসা পর্যন্ত গাড়ি চালাই। শুলকবহর ছাড়া কোথাও তেমন একটা যানজটে পড়ি না। প্রতিদিন সড়কের আধা কিলোমিটার জায়গাতেই ১৫-২০ মিনিট সময় চলে যায়। এভাবে দিনে অন্তত ১০ বার আসা যাওয়া করলে কত সময় অপচয় হয় ভাবেন?

 

একই কষ্টের কথা জানিয়ে রিকশাচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, সড়কটি একদিকে খানাখন্দে ভরা, অন্যদিকে যানজট। এ কারণে ওই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালালে কষ্টও বেশি হয়, সময়ও বেশি যায়। কিন্তু সে হিসেবে তো যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া বেশি দাবি করতে পারি না।

 

শুলকবহর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত এস এম জিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, বহুবছর ধরে আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলেই শুলকবহর এলাকা ডুবে যেতো। এবার বর্ষায় সেই সমস্যায় পড়িনি। কিন্তু আমাদের কপালে নতুন দুর্ভোগ হয়ে আসছে শুলকবহরের যানজট। প্রতিদিন যানজটে বসে থাকতে থাকতে ত্যক্ত হয়ে কিছুদিন ধরে মুরাদপুর পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে তারপর অফিসে যাওয়ার গাড়িতে উঠতেছি। এতে কষ্ট হলেও গাড়ির চেয়ে সময় কম যাচ্ছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শুলকবহরের এই সড়ক শুধু একটি পথ নয়, এটি নগরের প্রধান সড়কের একটি অংশও বটে। অথচ দিনের পর দিন এ রাস্তায় জনজীবনের নাভিশ্বাস উঠছে। ভোগান্তি কমাতে দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা, রাস্তা সংস্কার এবং অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত উল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন সেখানে সেতুর নির্মাণকাজ চলায় সড়কটি কিছুটা সরু করতে হয়েছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নির্মাণাধীন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে সড়কটি আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তখন একদিকে ভোগান্তি কমে যাবে, অন্যদিকে জলাবদ্ধতাও হবে না।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট