ডিলার নিয়োগ জটিলতায় নগরের ৩০ ওয়ার্ডে বিক্রি করা যায়নি ওএমএসের ন্যায্যমূল্যের চাল-আটা। এতে কয়েক হাজার মানুষ ঊচ্চমূল্যের বাজারে কম দামে চাল-আটা ক্রয় থেকে বঞ্চিত হন। অথচ চালের বাজারে নাভিশ্বাস অবস্থা নিম্ন-নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি মানুষের।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গতকাল থেকে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু হয়। ১১ ওয়ার্ডে চাল ও গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে ২৯ ওয়ার্ডে ডিলার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়নি। আর এক ওয়ার্ডে নিয়োগকৃত ডিলার ডিলারশিপ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভোক্তাদের কাছে প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, নগরের ১১ ওয়ার্ডে প্রতি ডিলারকে এক টন চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ডিলার নিয়োগ চূড়ান্ত না হওয়ায় অন্য ওয়ার্ডগুলোতে ওএমএসের খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
গত বছরের ৪ নভেম্বর ৪১ ওয়ার্ডে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস) ডিলার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে খাদ্য অধিদপ্তর। এতে ৪২০টি আবেদন জমা পড়ে। ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ঊচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন তৎকালীন ডিলাররা। আদালতের আদেশে ঝুলে যায় ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া। তবে দীর্ঘদিন ডিলার না থাকা ১২টি ওয়ার্ডে ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৫ মে ১২ ওয়ার্ডে খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস) জন্য ডিলার নিয়োগ করা হয়। ওয়ার্ডগুলো হলো, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর, ৮ নম্বর শুলকবহর, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া, ২১ নম্বর জামালখান, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নম্বর রামপুরা, ২৭ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা।
তবে এরমধ্যে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়োগকৃত ডিলার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানান জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মো. ফখরুল আলম। গতকাল থেকে ১১ ওয়ার্ডে ওএমএসের চাল-গম বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঝুলে রয়েছে ২৯ ওয়ার্ডের ডিলারশিপ : গত ২৬ জুন নগরের ২৯ ওয়ার্ডে প্রাথমিকভাবে ডিলার নিয়োগ করে খাদ্য অধিদপ্তর। এসব ডিলার নিয়োগে তদন্ত নিয়ে খাদ্য পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ঊচ্চ আদালতের নির্দেশনার কারণে মনোনীত ডিলারদের চূড়ান্ত করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। এতে ঝুলে যায় ওএমএসের খাদ্যশস্য বিতরণ কার্যক্রম।
খাদ্য কর্মকর্তারা জানান, নভেম্বর মাসে ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তৎকালীন ডিলাররা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়ে আসায় নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু ২৬ জুন আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত আবেদনকারীদের আবেদন নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরফলে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা ২৯ জনের ডিলারশিপ চূড়ান্ত করা যায়নি। দেওয়া হয়নি বরাদ্দও।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত। এর আগে ডিলার নিয়োগ চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। আর পুরোনো ডিলারদের বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই। সবমিলে ২৯ ওয়ার্ডে ওএমএসের খাদ্যশস্য বরাদ্দ ও বিতরণ ঝুলে রয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর