সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর শুরুর সময়ে জুলাই মাসে দেশব্যাপী শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। যা পরবর্তীতে গণ-অভ্যুত্থান ও আগস্টে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পতন ঘটে সরকারের। ঠিক তার পরপরই দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, দুই ঈদের ছুটি, পরিবহন শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন, কাস্টমসের কলম বিরতি, সাম্প্রতিক এনবিআরের কমপ্লিট শাটডাউন ইত্যাদি একের পর এক চলেছে অর্থবছরের পুরো সময় জুড়ে। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রম প্রায় দুই মাস বাধাগ্রস্ত হয়। তবে সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করেও চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের হিসেব অনুয়ায়ী কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টিইইউস। যা বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৭ টিইইউস বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যার মাধ্যমে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক শুন্য ২ শতাংশ।
এছাড়া সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ১৩ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩ মেট্রিকটন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করে। যা বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিকটন। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৫ মেট্রিকটন বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে। এতে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শুন্য ৭ শতাংশ।
একই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যাও। প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করে। যা বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৯৭১টি। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর ১০৬টি বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। এতে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা, মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ডের সদস্যবৃন্দের নিরলস তদারকি ও বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের অটোমেশন সার্ভিস সুবিধা, ই-গেট পাস চালু, কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে এই সাফল্য এসেছে। একই সঙ্গে বন্দর ব্যবহারকারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়ার প্রবণতা, বন্দরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ তাদের সার্বিক সহযোগিতা এ সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের শেষের ২/৩ দিন এনবিআরের শাটডাউন না থাকলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা আরো বাড়তো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এমন সাফল্যে নিঃসন্দেহে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের গতিকে সমৃদ্ধির শিখরে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, সমুদ্রপথে দেশের কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশ হয় এই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কনটেইনারবাহী জাহাজ ও খোলা পণ্যবাহী বাল্ক কার্গো এ দুই ধরনের জাহাজে করে আসা-যাওয়া পণ্য ওঠা-নামার ভিত্তিতে বন্দরের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়। সিমেন্ট, ইস্পাতসহ খাদ্যশস্য ও সাধারণ পণ্য আমদানি হয় বাল্ক কার্গো বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি হয় কনটেইনারে করে।
পূর্বকোণ/ইবনুর