নগরীর বাদশাহ মিয়া সড়ক থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের চেষ্টা ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ হতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন ভাস্কর অলক রায়। ইনস্টিটিউটটির সাবেক এই অধ্যাপক জানিয়েছেন, চারুকলা যেন ‘হাতছাড়া’ না হয়, সে জন্য চট্টগ্রামের শিল্পীদের যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
গতকাল রবিবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির গ্যালারি হলে আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনা সভায় ভাস্কর অলক রায় এসব কথা বলেন। এতে চারুকলা ইনস্টিটিউট স্থানান্তর নিয়ে নিজেদের মতামত জানান নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
ভাস্কর অলক রায় বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে শহর থেকে চবি ক্যাম্পাসে নেয়ার যে উদ্যোগ- তার প্রতিবাদ জানাই। এ কারণে হয়তো আমাদের উপর আক্রমণ করা হতে পারে। আমাদের নানাভাবে ট্যাগ দেয়া হতে পারে। তবুও আমরা প্রতিবাদ করে যাবো। কারণ শিল্পীদের কাছ থেকে চারুকলা কেড়ে নেয়া হলে সাংস্কৃতিক জোয়ারে ভাটা পড়বে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা সময়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ‘দখলের চেষ্টা’ করেছিলো অভিযোগ করে সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, নানা সময়ে এখানে ক্লাব বানাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। ইভিনিং এমবিএ’র পাঠদান কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু সফল হয়নি। এখন আবার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীন শিল্পচর্চার সুযোগ নষ্ট করা হচ্ছে। আলোচনায় আরও অংশ নেন মুনীর হেলাল, প্রদীপ দেওয়ানজী, বিজন মজুমদার, ফারুক তাহের, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট এটি নগরীর সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে একীভূত হয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মূল ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে এই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম চলছিলো।
সম্প্রতি চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যেই এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত থেকে এ কার্যক্রমের উপর ৩ মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২৩ জুন এক রিট পিটিশনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. মাহাবুবুর রহমান রিট পিটিশনটি দায়ের করেন। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইউজিসি চেয়ারম্যান, মাউশির মহাপরিচালক, চবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (একাডেমিক), কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালককে বিবাদী করা হয়।
আদালতে রিট পিটিশনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। অন্যদিকে বিবাদীদের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম সরকারি আর্ট কলেজকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৯ সালে সরকার একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তবে বিজ্ঞপ্তির সব শর্ত পূরণ না করেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি আর্ট কলেজকে ইনস্টিটিউটে রুপান্তর করে পাঠদান শুরু করে। কলেজের সব সম্পত্তি দান করার জন্য একটি দানপত্র দলিলের খসড়া করা হলেও তা নিবন্ধনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করা হয়নি।
তিনি বলেন, আর্ট কলেজের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থীর দায়ের করা রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট চারুকলা ইনস্টিটিউট স্থানান্তর কার্যক্রমে ৩ মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া কেন চারুকলা বিভাগ ও সরকারি আর্ট কলেজকে একীভূত করে একটি স্বাধীন ইনস্টিটিউট গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা আইনগত কর্তৃত্ববিহীন ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ইনস্টিটিউটের স্থানান্তর অবৈধ এবং আইনগত অকার্যকর ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন।
পূর্বকোণ/ইবনুর