চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

পাঁচদিনেই ‘ম্যাজিক ঋণ’ গায়েব ৫০ কোটি টাকা!
ছবি: সংগৃহীত

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা

পাঁচদিনেই ‘ম্যাজিক ঋণ’ গায়েব ৫০ কোটি টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ জুন, ২০২৫ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

কোনও যাচাই-বাছাই, গোডাউন পরিদর্শন বা সহায়ক জামানত ছাড়াই ঋণ অনুমোদন। মাত্র পাঁচদিনের মধ্যে বিপুল অঙ্কের ঋণ ছাড়। এরপর সেই ঋণের টাকা অন্যখাতে স্থানান্তর। অতঃপর আত্মসাৎ। এভাবেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ৫০ কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতি।

 

মাত্র পাঁচদিনের মধ্যেই গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার কৌশলে অনুমোদিত হয়েছিল এই ঋণ। কিন্তু এই ‘ম্যাজিক ঋণ’ কোথাও খরচ হয়নি ব্যবসায়িক কাজে। বরং অজানা গন্তব্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বিশাল অঙ্কের টাকা। আত্মসাতের পেছনে রয়েছেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার), সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী মোহসিনসহ ২৬ জনের যোগসাজশ। এই অদৃশ্য ‘ম্যাজিক ঋণের’ সন্ধান মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে।

 

শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি কারও। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন। এক মামলায় ২৯ কোটি ১৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা এবং আরেকটিতে ২০ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১’র উপ-পরিচালক মো. সুবেল আহমদ বলেন, অনুসন্ধানে গুরুতর জালিয়াতির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এই লুটপাটে সরাসরি জড়িত থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঋণগ্রহীতা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মোট আত্মসাতের পরিমাণ প্রায় ৫৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

দুদকের মামলায় বলা হয়, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এই অর্থ ঋণ আকারে ছাড় করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং গুদাম সরেজমিনে পরিদর্শন করা, পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই, সহায়ক জামানত গ্রহণ এবং ঋণ কমিটির সুপারিশ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোনটিই করা হয়নি। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক, অপারেশন ইনচার্জ, ঋণ কর্মকর্তা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঋণ প্রস্তাব তৈরি করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মাত্র পাঁচ কার্যদিবসে ঋণ অনুমোদন এবং টাকা ছাড় করা হয়। ঋণ পাওয়ার পরপরই সেই অর্থ প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে গোপনে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

 

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, গ্রাহকরা যে গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তারাও কোন সরেজমিন পরিদর্শন করেননি। মূলত দলীয়ভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের উদ্দেশ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। দুদকের দায়ের করা দুটি মামলায় আসামি হয়েছেন ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক, অপারেশন ইনচার্জ, ঋণ কর্মকর্তা, হেড অফিসের ঋণ বিভাগীয় কর্মকর্তা, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইনচার্জসহ মোট ২৬ জন। এর মধ্যে ১৩ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ১২ জন ব্যবসায়ী ও জামিনদাতা।

 

আসামি যারা: সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক, সাজিদ কটন মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোহসিন, তার স্ত্রী ও চেয়ারম্যান শামীমা নারগিস চৌধুরী, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার, সাবেক পরিচালক বেলাল আহমেদ, গোলাম মোহাম্মদ, মোহাম্মদ ফারুক, আরিফ আহমেদ, ওসমান গণি, মায়মুনা খানম, সরোয়ার জাহান মালেক, মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল, শাহানা ফেরদৌস, সাজেদা নূর বেগম ও বোরহানুল হাসান চৌধুরী, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ কুতুবউদ্দৌলা ও এসএএম সলিমউল্লাহ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (আগের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড) প্রধান কার্যালয়ের ঋণ বিভাগের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) ও ঋণ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মাহমুদ আলম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মশিউর রহমান জাহেদ, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসএভিপি) ও ব্যবস্থাপক মো. শামসুল আলম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) ও ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মুন্নশ্রী চক্রবর্তী, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হাসান আলী, জুনিয়র অফিসার রিফাত ইফতেখারুল আলম। তারা সবাই দুটি মামলায় আসামি। বাকি দু’জন হলেন- ঋণ বিভাগের জুনিয়র অফিসার মো. মিজানুর রহমান, নিগার সুলতানা। তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট