চট্টগ্রাম বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫

সর্বশেষ:

নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৬ মাস চলবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল
চট্টগ্রাম বন্দর

ঈদের ছুটিতে বন্দর চালু রেখেও এড়ানো যায়নি কনটেইনার জট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুন, ২০২৫ | ১:২৯ অপরাহ্ণ

প্রতিবারেই ঈদের ছুটিতে বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। যদিও বিভিন্ন মহল থেকে বন্দর চালু রাখার দাবি করা হয়, কিন্তু দেখা যায় উল্টোচিত্র। বন্দর ঠিকই চালু রাখা হয়, তবে পণ্য খালাস নিতে আসে না আমদানিকারকেরা বা তাদের প্রতিনিধিগণ। মূলত ঈদের লম্বা ছুটিতে দেশের বেশিরভাগ কল কারখানা বন্ধ থাকায় তাদের আমদানিকৃত পণ্য খালাস হয় না। যার ফলে ঈদের ছুটিতে বন্দর চালুর সুফল পাওয়া যায় না। এবারও ঠিক একই চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ঈদের ছুটিতে বন্দর চালু রাখার পরেও সাত দিনে জমেছে অতিরিক্ত অন্তত ১১ হাজার কনটেইনার।

 

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ছুটি শুরুর আগে ৪ জুন বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা)। গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকাল আটটা পর্যন্ত তা ৩৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। যা বন্দরের কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশের বেশি। প্রতি ঘণ্টায় এই জায়গা কমে আসছে। তার মানে ছুটির এ সময়ে গত সাত দিনে জমেছে ১১ হাজার কনটেইনার। কনটেইনার রাখার জায়গা কমলে পণ্য খালাস কার্যক্রমসহ বন্দর পরিচালন কার্যক্রমে সময় বেশি লাগে। তাতে পণ্য হাতে পেতে ব্যবসায়ীদের সময় লাগবে বেশি।

 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ৫ জুন থেকে একটানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়। ছুটির সময় শুধু ঈদের দিন এক পালায় বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে এক পালা ছাড়া ছুটির সময় জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা আমদানি হওয়া এসব পণ্য খুব একটা খালাস করেননি। ফলে কনটেইনার জমতে শুরু করে বন্দরে। ঈদের ছুটি শেষ হবে আজ শনিবার। এরপর রবিবার থেকে স্বাভাবিক গতিতে কাস্টমসসহ সরকারি-বেসরকারি কার্যালয় খোলা থাকবে। খোলার আগে কনটেইনারের স্তূপ আরও বাড়তে পারে বলে বন্দরের কর্মকর্তারা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কনটেইনারের স্তূপ বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ হলো, বন্দর থেকে কনটেইনার পণ্যের খালাস কমে যাওয়া। বন্দরে প্রতিদিন ১০/১১টি জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়। শুল্কায়ন শেষে তা বন্দর থেকে খালাস করে নেন আমদানিকারকেরা। তবে ছুটির সময় পণ্য খালাস কমে গেলে তাতে কনটেইনারের জট বেড়ে যায়।

 

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির মধ্যে গত সাত দিনে বন্দরে আসা বিভিন্ন জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়েছে ২৪ হাজার। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা খালাস করে নিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার কনটেইনার। জাহাজ থেকে নামানো সাড়ে ১৫ হাজার কনটেইনার রয়ে গেছে বন্দরে। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু খালি কনটেইনার সরিয়ে নেয়। তাতে পণ্যবোঝাই কনটেইনার রাখার কিছু জায়গা তৈরি হয়।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ঈদের লম্বা ছুটির সময়ের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম সচল রয়েছে। এবার যাতে জট না হয় সে জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, যে কারণে এখন পর্যন্ত বন্দরে বড় ধরনের জট তৈরি হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা এখন দ্রæত পণ্য খালাস না করলে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়বে। তাতে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

 

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে চার হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। এবার ছুটির সময় গত সাত দিনে গড়ে খালাস হয়েছে ১ হাজার ৩৭৭ কনটেইনার। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দুই হাজার কনটেইনার খালাস হয়েছে। খালাসের হার পাঁচ হাজারে উন্নীত না হলে জট কমবে না বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।

 

এদিকে অফডকগুলোতেও রপ্তানি পণ্যের অত্যাধিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত, ব্যবসায়ীরা ঈদের লম্বা ছুটিতে কারখানা বন্ধ রাখার জন্যই আগাম পণ্য প্রস্তুত করে অফডকে পাঠিয়ে দিয়েছে। যার অনেকগুলোরই শিপমেন্ট হবে আরো পরে। কিন্তু সে সময় কারখানা বন্ধ থাকবে তাই আগাম অফডকে রপ্তানি পণ্য পাঠিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে অফডক মালিকদের সংগঠন বিকডা। এজন্য রপ্তানি পণ্যের স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে অফডকে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট