রাত তখন প্রায় ১২টা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে দৌড়াদৌড়ি লেগে আছে। দুর্ঘটনায় আহত কলেজ পড়ুয়া এক তরুণের তখন বাঁচার লড়াই। রক্তের প্রয়োজন। পরিবার-পরিজন হন্যে হয়ে ঘুরেও পাচ্ছে না উপযুক্ত গ্রুপের রক্ত। হতাশা যখন সব আলোকরেখা নিভিয়ে দিচ্ছে, ঠিক তখনই হাসপাতালের গেটের পাশে এসে দাঁড়ায় এক তরুণ।
রাতের শেষভাগে খবর পেয়েই ছুটে আসা ২৪ বছর বয়সী তরুণ শাহেদ রোগীর কোনো আত্মীয় নয়, পরিচিতও নয়। তবু একটা জীবন বাঁচানোর তাগিদে এসেছেন তিনি। শাহেদ বলেন, নিয়মিতই রক্তদান করে থাকি। ফেসবুকে যখন দেখলাম একজন রক্তের জন্য পোস্ট করেছেন। তখন মনে হলো, রক্ত না পেলে একজন মায়ের বুক খালি হয়ে যেতে পারে। তাই চলে এলাম।
রক্ত নেওয়ার পর বারান্দায় রোগীর বাবা শাহেদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অশ্রুসিক্ত চোখে বললেন, বাবা, তুমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিলে। দোয়া করি, আল্লাহ তোমাকে সারাজীবন ভালো রাখুক। একসময়ে রক্তের জন্য মানুষের ছুটোছুটি থাকলেও শাহেদের মতো এখন অনেক তরুণই স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসছেন। এর বড় একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকাণ্ড।
যদিও সঠিক পরিসংখ্যা নেই, তবে রক্তদানে এবং রক্ত সংগ্রহের সঙ্গে কাজ করা সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের বড় অংশই হচ্ছে তরুণ-যুবকরা। যাদের পরিমাণ ৯০ শতাংশ। যারা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু থেকে শুরু করে সড়ক দুর্ঘটনার আহত কিংবা জটিল অপারেশনের রোগীদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন।
চমেক হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে দুই শতাধিক মানুষের রক্ত আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে। যা মাসে ৬ হাজারেরও বেশি। কোন কোন সময় এ সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। এত সংখ্যক ব্লাডের বেশিরভাগই আসে স্বেচ্ছাসেবীসহ যুবক ও তরুণদের কাছ থেকে।
সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিটের তথ্য অনুসারে, শাখাটিতে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়ে থাকে। বেশিরভাগই আসে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে। যাদের বেশিরভাগই হচ্ছে তরুণ ও যুবক। প্রায় ৯০ ভাগই স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে সংগ্রহকৃত।
রক্তদাতা সংগঠন সিটিজি ব্লাড ব্যাংকের কার্যকরী সদস্য লুৎফুল কবির বলেন, অনেকেই ভাবেন, রক্ত দিলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। অথচ রক্তদান নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। যারা একবার রক্ত দিয়েছেন, তারাই জানেন মানুষের প্রাণ বাঁচানোর সেই সুখানুভূতি।
এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ ১৪ জুন শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘রক্ত দিই, আশা জাগাই: সবাই মিলে জীবন বাঁচাই।’
পূর্বকোণ/ইবনুর