অমাবস্যার-পূর্ণিমার আগে ও পরে টানা ৪ থেকে ৫ দিন মাত্রাতিরিক্ত লবণ থাকে হালদা ও কর্ণফুলীর নদীর পানিতে। এ সময়ে জোয়ারের সময়ের নদীর পানিতে তুলনামূলক অতিরিক্ত লবণ থাকে বেশি। এ কারণে ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রকল্পগুলো বন্ধ রাখতে হয়। তাতে দৈনিক পানি উৎপাদন কমে ৫ থেকে ৬ কোটি লিটার। উৎপাদন কমার কারণে দুর্ভোগে পড়েন গ্রাহকেরা। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহের এ চিত্র চলে আসছে গত কয়েকমাস ধরে। মূলত দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এ সমস্যা চলে আসছে। বৃষ্টি হলে কমবে লবণাক্ততা। বাড়বে পানির উৎপাদন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় কাপ্তাই লেকে পানি থাকে সর্বোচ্চ ১০৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। চলতি এপ্রিলে রয়েছে ৮৭ দশমিক ৭৭ মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। পানি কম থাকায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি মাত্র ইউনিট চালু রয়েছে। এতে বঙ্গোপসাগরের লবণ পানি জোয়ারের সময়ে কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদায় প্রবেশ করছে। লবণ পানির কারণে হালদা ও কর্ণফুলী নদীভিত্তিক ওয়াসার ৪টি প্রকল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ ৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়াসার পানি উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে দৈনিক প্রায় ৪৬ কোটি লিটার। কিন্তু হালদা নদীতে লবণ ও কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে দৈনিক প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি লিটার।
ওয়াসা সূত্র জানায়, পূর্ণিমা-অমাবস্যার আগে ও পরে টানা ৪ থেকে ৫ দিন জোয়ারের পানিতে অতিরিক্ত লবণ থাকে। এসময় প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২১০০ থেকে ২৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণের উপস্থিতি মিলছে। এ অবস্থায় জোয়ারের সময়ে হালদা নদীভিত্তিক মোহরা ও মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের কয়েক ঘণ্টা করে পানি উত্তোলন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে দুটি প্রকল্পে উৎপাদন কমেছে দৈনিক আড়াই থেকে তিন কোটি লিটার। স্বাভাবিক সময়ে এ দুটি প্রকল্প থেকে পানি উৎপাদন হয় দৈনিক ১৮ কোটি লিটার। অপরদিকে পানির স্তর কমে যাওয়ায় রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় কর্ণফুলী নদীভিত্তিক কর্ণফুলী সরবরাহ প্রকল্প -১ এবং ২ থেকেও উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এই প্রকল্পে পানি উৎপাদন হয় দৈনিক ২৮ কোটি লিটার। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২৬ কোটি লিটার।
সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের শেষে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণের উপস্থিতি শুরু হয়। এরপর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ-এ তিন মাসে নদী দুটির পানিতে লবণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতি এপ্রিলে এসে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সর্বশেষ গত ঈদের সময়ে হালদার প্রতিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া গেছে। তবে অমাবস্যার চলে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করেছে ওয়াসা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া হ্রাসের কারণে হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময়ে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় ওয়াসার সবগুলো প্রকল্পে পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাতে ওয়াসার পানি উৎপাদন হ্রাস পায়। তবে এখন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি হলে কাপ্তাই লেকে পানি বাড়ে। তাতে লেক থেকে পানি ছাড়া হয় বেশি। অপরদিকে উজান থেকে পানির ঢল নামলে এ দুই নদীর পানিতে লবণ পানি থাকে না। তাই এখন বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছি।
পূর্বকোণ/ইব