চট্টগ্রাম শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

৪ প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণা ­­­ চট্টগ্রামে চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগীর ৮৮ ভাগই ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত ­­­ বিপজ্জনক কসমোপলিটান ­­­ উপধরন ছড়িয়েছে বেশি

ভারত-মিয়ানমারের ডেঙ্গুর ধরন চট্টগ্রামে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:২৮ অপরাহ্ণ

বিগত বছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে দাপট দেখাচ্ছে ডেঙ্গুর ধরন ‘ডেন-২’। নতুন খবর হচ্ছে- ‘কসমোপলিটান লিনিয়েজ’ নামক ডেন-২ এর এক বিপজ্জনক উপধরন মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা ও জটিলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং মৃত্যুহারও বাড়াচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জিনোম সিকুয়েন্স করে এমন তথ্য পেয়েছেন একদল গবেষক।

 

গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে চলমান গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। কসমোপলিটান ধরনের কারণেই চট্টগ্রামে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেড়ে যাওয়া ও মৃত্যুর হারের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকগণ। তারা জানান, চট্টগ্রামে পাওয়া ‘কসমোপলিটান লিনিয়েজ’ বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। দেশের অন্য সব অঞ্চল থেকে পাওয়া ইতিপূর্বের ধরনগুলো থেকে চট্টগ্রামে পাওয়া এ ধরনটি একেবারেই ভিন্ন। বিপজ্জনক এ ধরনগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে বিদ্যমান। গবেষকদের ধারণা- পর্যটক এবং রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে তা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

 

এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে চলমান এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে আইসিডিডিআরবি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। গত বছর ১ হাজার ৫শ’ রোগী এবং চলতি বছর ২শ’ রোগীর ওপর এখন পর্যন্ত গবেষণাটি চলানো হয়। যা এখনো চলমান।

 

গবেষণায় দেখা যায়, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৯ ভাগ রোগীই ‘ডেন ২’ সেরোটাইপে আক্রান্ত ছিল। আর এ বছর ৮৮ ভাগ রোগী ‘ডেন ২’ তে আক্রান্ত। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল পুরুষ, ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি পাঁচ জনে একজন শিশু।

 

গত বছর ১ হাজার ৫শ’ রোগীর ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআরবি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন ল্যাব।

 

এ বছর ইতিমধ্যে ২০০ রোগীর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ হয়েছে এবং গবেষণা এখনও চলমান। আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পরিচালিত এই গবেষণা দলে আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার ও ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. মো. আবদুর রব।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সাত্তার বলেন, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান ও নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য জিনোম সিকুয়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সব তথ্য গুরুত্ব সহকারে সরকার গ্রহণ করলে তা পরবর্তীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

এই জিনোম সিকুয়েন্সগুলো জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিআইএসএআইডি) এ গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও এই গবেষণার দুইটি গবেষণাপত্র ইতিমধ্যে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইমিউনলজি এবং আমেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিনে গৃহীত হয়েছে।

 

ডেঙ্গুর হটস্পট নগরীর পাঁচ এলাকা : গবেষণায় চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল ছিল এ পাঁচ এলাকার। এলাকাগুলো হলো, বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালী, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামী। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া, বোয়ালখালী এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে।

 

পূর্বকোণ/এমটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট