কেউ নাম করা ইঞ্জিনিয়ার, কেউ দেশসেরা চিকিৎসক। কেউ কাজ করছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে। কেউ সুনাম কুড়িয়েছেন ব্যবসায়। তবে তাদের সবার একটাই পরিচয়- তারা ‘ওল্ড ফৌজিয়ান’। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। দেশের প্রথম এই ক্যাডেট কলেজের প্রশিক্ষণ ও আদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিতে তারা ৪৮ জন মিলে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। শুধু আদর্শ ও প্রশিক্ষণ ছড়িয়ে দেওয়া নয়- নিজেদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলে আজীবন ওল্ড ফৌজিয়ানদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে অন্যরকম উদ্যোগও নিয়েছেন অংশীদাররা। ৪৮ জন অংশীদারের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের সদস্যরা সেই শেয়ারের অংশীদারিত্ব পাবেন না। পরিচালনা বোর্ডের দ্বারা নির্বাচিত ওল্ড ফৌজিয়ানের কাছে শেয়ারটি বিক্রি করে দিতে হবে। তবে বিক্রি লব্দ শেয়ারের টাকা মৃতের পরিবার পাবেন।
জানতে চাইলে স্কুল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এম সাইফুল ইসলাম জানান, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের আদর্শ ও প্রশিক্ষণ সমাজে ছড়িয়ে দিতে আমরা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। ক্যাডেট কলেজের প্রথম প্রধান শিক্ষক উইলিয়াম মরিস ব্রাউনের নামেই স্কুলের নামকরণ করেছি। এই স্কুল যেন আজীবন ওল্ড ফৌজিয়ানদের হাতেই পরিচালিত হয়- সেটি নিশ্চিত করে মেমোরেন্ডাম তৈরি করেছি। এসব কিছুই করা হয়েছে কলেজের প্রতি আমাদের নিখাদ ভালোবাসা থেকে।
তিনি বলেন, কোম্পানির মেমোরেন্ডামের শেয়ার ট্রান্সফার নিয়ম অনুযায়ী- আমাদের কোনো শেয়ারহোল্ডার মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার বাই ডিফল্ট ওই শেয়ারের মালিক হতে পারবেন না। পরিচালনা বোর্ড আইন মেনে এসেটস ভ্যালু ধরে ওই শেয়ারের দাম নির্ধারণ করবে। মৃত্যুবরণ করা শেয়ারহোল্ডারের পরিবারকে নির্ধারিত দাম পরিশোধ করে বোর্ড নির্বাচিত ওল্ড ফৌজিয়ান ওই শেয়ার কিনে নিতে পারবেন। অর্থাৎ সব ওল্ড ফৌজিয়ানের জন্য স্কুলের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
স্কুল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত দু’জন শেয়ারহোল্ডার মৃত্যুবরণ করেছেন। নিয়ম অনুসরণ করে তাদের শেয়ার দুই ওল্ড ফৌজিয়ানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণকারী শেয়ারহোল্ডার ও দৈনিক পূর্বকোণের প্রয়াত সম্পাদক স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা তার শেয়ারের মালিকানা পাননি। পরিচালনা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে তার পরিবারকে শেয়ারের দাম পরিশোধ করে সেটি কিনে নেন আরেক ওল্ড ফৌজিয়ান ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মালেক।
ক্যাডেট কলেজের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল মালেক জানান, স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শেয়ার কিনতে অনেকেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ওল্ড ফৌজিয়ান হওয়াসহ অন্যান্য শর্তপূরণ করায় পরিচালনা বোর্ড আমাকেই মনোনীত করে। আমি এসেটস ভ্যালু অনুযায়ী তসলিম উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারকে নির্ধারিত দাম পরিশোধ করে শেয়ারটি বছরখানেক আগে কিনে নিই। স্কুলকে ওল্ড ফৌজিয়ানদের হাতে রাখার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
কলেজ জীবনে শেখা শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, চারিত্র্যিক ও নেতৃত্বের গুণাবলী সমাজে ছড়িয়ে দিতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সাবেক ৪০ ক্যাডেট। এই লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ‘ফৌজিয়ান এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’ গঠন করেন তারা। স্কুলের নাম ঠিক করা হয় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রথম প্রধান শিক্ষক উইলিয়াম মরিস ব্রাউনের নামে- স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। বর্তমানে এই স্কুলের অংশীদার ৪৮ জন ওল্ড ফৌজিয়ান।
২০১০ সালে স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চললেও এখন চলছে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। লালখান বাজার এবং চট্টেশ্বরী রোডের দুটি ক্যাম্পাসে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এই স্কুলে। যারা ইংরেজি মাধ্যমে জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ক্যাডেট কলেজের মতো নানা সহ-পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।