ফিরিঙ্গিবাজার থেকে নতুন ব্রিজ যেতে মেরিনার্স সড়কের দক্ষিণ পাশে নদী ভরাট করে গড়ে উঠা খালি জায়গায় পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সেখানে বালি ভরাট এবং মাটি সমান করার কাজ চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জায়গাটির মালিকানা দাবি করে ‘মেরিনার্স পার্ক’ নির্মাণ করলেও বাস্তবে এটি পরিত্যক্ত জায়গায় পরিণত হয়। খালের মুখে নিচু ব্রিজ নির্মাণ করার কারণে ছোট ছোট খাল দিয়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরে মানুষের নিরাপদে একটু হাঁটার জায়গা নেই। নিরিবিলি বসে সময় কাটানোর জায়গার অভাব। অথচ মেরিনার্স পার্কটি ক্রমান্বয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সেখানে বালি রেখে ব্যবসা করছে। বখাটে এবং মাদকাসক্তদের আড্ডাখানায়ও পরিণত হয়েছে এই স্থানটি। কর্ণফুলী খনন করে ভরাট করা এই জায়গাটির মালিক জেলা প্রশাসন। তাই সেখানে একটি পার্ক করার উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। যেখানে থাকবে ওয়াকওয়ে, বসার বেঞ্চ, এবং খেলাধুলার মাঠ। থাকবে আলোকায়নও। তিনি জানান, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রথমে জায়গাটির মালিকানা দাবি করেছিল। কিন্তু তারা পর্যাপ্ত কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। যে মুহূর্তে জেলা প্রশাসন পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করবে তার আগে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, মূল জায়গাটি আর এস খতিয়ান মূলে বন্দরের মালিকানাধীন ছিল। পরে নদী গর্ভে চলে যায়। কোন জমি নদী গর্ভে চলে গেলে তার মালিক হয়ে যায় সরকার। তবে ৩০ বছরের মধ্যে তা আবার ভেসে উঠলে জমির মালিকানা তখন মূল মালিকের কাছে চলে যায়। তাছাড়া বন্দর আইনে বলা আছে নদী থেকে কৃত্রিমভাবে কোন জমি বের করা হলে তার মালিক হবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই এই জমির প্রকৃত মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খতিয়ান সংশোধন না হওয়ার কারণে তা এখনো জেলা প্রশাসন মালিকানা দাবি করার সুযোগ পাচ্ছে। খতিয়ান সংশোধনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছে। সম্প্রতি এই জায়গা থেকে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্দরের পক্ষ থেকে সেখানে পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই তারা মাটি কেটেছে। এর আগে সেখানে কয়েকটি ব্রিজও নির্মাণ করা হয়। পার্কে ওয়াকওয়ে, শিশুদের খেলার মাঠ, বসার বেঞ্চ ইত্যাদি থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফিরিঙ্গিবাজার থেকে নতুন ব্রিজের পশ্চিম পাশ পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিনই গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। ব্রিজের পশ্চিমে লাগোয়া জায়গাটি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল। তারও পশ্চিম পাশে রয়েছে মেরিনার্স পার্ক নামের খালি জায়গাটি। নদীর একাংশ ভরাট করে নির্মাণ করা এই জায়গাটি নামে পার্ক হলেও বাস্তবে এখানে পার্কের কোন সুযোগ সুবিধা নেই। এই জায়গায় গড়ে উঠেছে বালির ব্যবসা। মাদকাসক্ত এবং বখাটেদের আখড়ায় পরিণত হওয়া এই জায়গাটিতে বসার বা হাঁটার কোন পরিবেশ নেই। অথচ কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন এই পার্কটি হতে পারতো চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ক। যেখানে মানুষ অবসর সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে পারতো। দৈনন্দিন কাজ শেষে বিকালে সেখানে হাঁটতে পারতো। একইসাথে বহমান কর্ণফুলীর নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করতে পারতো। কিন্তু উদ্যোগের অভাবে এটি একটি পরিত্যক্ত জায়গায় পরিণত হয়েছে।
ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব পূর্বকোণকে জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জায়গাটি দখলে নিয়ে উঁচু-নিচু সমান করা হচ্ছে। কিছু অংশ বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এটি একটি সুন্দর উদ্যোগ। কাজ সম্পন্ন হলে সাধারণ মানুষ অবসর সময়ে একটু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবে।
পূর্বকোণ/পিআর