একই রুমে পাশাপাশি থাকতো ওরা তিনজন। রাতে একসাথে ঘুমাতো অন্তর, রহমান ও সালাউদ্দিন। মধ্যরাতে দুইজন উঠে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সালাউদ্দিনকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে।
চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নগরীর টাইগারপাসস্থ আমবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সালাউদ্দিনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর পর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই-মেট্রো)। পলাতক ছিল অন্তর মিয়া। গত রবিবার বিকেলে সিলেটে চর মৌলভীবাজার থেকে অন্তর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
পিবিআই’র পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, লাশ উদ্ধারের পর পর রহমান নামে একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছিলাম। ওই সময় পলাতক ছিল অন্তর মিয়া। মৌলভীবাজার থেকে তাকে রবিবার বিকেলে গ্রেপ্তার করি। সালাউদ্দিনকে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গতকাল সোমবার বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে অন্তর মিয়া।
অন্তর মিয়া (২৫) বাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরের মনির মিয়ার ছেলে। গতকাল সোমবার আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অন্তর মিয়া জানান, তিনি আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রিকশা চালাতেন। এরপর কিছুদিন সিএনজি ট্যাক্সি চালান। আট নয় মাস আগে সিএনজি ট্যাক্সি চুরির অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে ২০ দিন জেলে ছিলেন। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে সিলেট গিয়ে শাহজাহাল মাজার এলাকায় গিয়ে দৈনিক ৪’শ টাকা বেতনে একটি চায়ের দোকানে চাকরি নেন। সেখানে নিজেকে স্বপন নামে পরিচয় দেয় অন্তর। ওই দোকানে আগে থেকে চাকরি করতেন সালাউদ্দিন। কয়েকদিন পর দু’জনেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন। চলে আসার সময় দোকানে থাকা একটি ড্রিল মেশিন চুরি করে নিয়ে আসেন।
জবানবন্দিতে অন্তর মিয়া বলেন, চট্টগ্রামে এসে দু’জনে টাইগারপাস এলাকায় ২২’শ টাকায় একটি রুম ভাড়া নেন। সেখানে পানির খরচ আলাদা দিতে হতো। কয়েকদিন মোবাইল ফোন কোম্পানি রবির অফিসে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সেখানে একটি ছেলের সাথে সালাউদ্দিনের মারামারি হলে দু’জনে চলে আসেন। অন্তরের দৈনিক মজুরির টাকা সালাউদ্দিনের কাছে জমা থাকতো। এরমধ্যে টাইগারপাস মোড়ে চায়ের দোকানের কর্মচারী আবদু রহমানের সাথে তাদের পরিচয় হয়। রহমান ভাড়ার বিনিময়ে (সাবলেট) তাদের রুমে থাকতে চাইলে থাকতে দেয়।
অন্তর মিয়া বলেন, কয়দিন পর বাণিজ্য মেলা শুরু হলে সেখানে সালাউদ্দিন স্টল তৈরির কাজ নেয়। অন্তর ও রহমান সকাল সাতটা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত সালাউদ্দিন সাথে কাজ করত। বিনিময়ে দৈনিক ৭০০ টাকা বেতন দিত। পরে অন্তর জানতে পারে যে, মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে দৈনিক ১৩ থেকে ১৪’শ টাকা বেতন নিয়ে তাদেরকে অর্ধেক বেতন দেয় সালাউদ্দিন। পাওনা বাকী টাকার বিষয় নিয়ে সালাউদ্দিনের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে টাকা দিতে রাজি হলেও কাজে নেয়া বন্ধ করে দেয়।
অন্তর বলেন, ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় বাসার ড্রামে পানি ছিলোনা। পানি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন বলেন, ‘তোরা টাকা দিসনা তাই পানি নেই’। তখন আবদু রহমান বলেন, আমাদের টাকা তো তোর কাছে। এ নিয়ে তিনজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে মা বোন তুলে গালিগালাজ করে সালাউদ্দিন। পরদিন শুক্রবার টাকা দেয়ার কথা ছিল তাও দেয়নি।
পূর্বকোণ/পিআর