চট্টগ্রামে গত এক বছরের ব্যবধানে ৫০ হাজার গবাদি পশু কম উৎপাদন হয়েছে। মূলত পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিরা নিরুৎসাহিত হওয়ায় এই সংখ্যা কমেছে। এবারের কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় গবাদিপশুর ঘাটতি রয়েছে প্রায় এক লাখ। তবে কাগজে কলমে এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি থাকলেও অর্থনৈতিক চাপে থাকা মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের অনেকেই ভাগে কোরবানি দেবেন। তাই এবার অন্য বছরের তুলনায় কোরবানি পশুর চাহিদাও কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তারা প্রাথমিকভাবে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তাতে চট্টগ্রামে কোরবানিযোগ্য ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০টি গবাদি পশু মজুদ আছে। তবে এবার চট্টগ্রাম জেলার চাহিদা ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। অর্থাৎ প্রায় এক লাখ পশুর ঘাটতি থাকছে।
গতবছর কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর চাহিদা ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার। সে বছর বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও খামারে কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। চট্টগ্রাম জেলায় গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ৫০ হাজার পশু কম উৎপাদন হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, এবারের কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় ১৫টি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরে কৃষকের খামারে মজুদ থাকা গবাদি পশুর মধ্যে কোরবানিযোগ্য ষাঁড় রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২১১টি, বলদ ১ লাখ ৪০ হাজার ৩১০টি এবং গাভী রয়েছে ৩৭ হাজার ৮০৪টি। মোট গরুর সংখ্যা ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি। মহিষ রয়েছে ৭১ হাজার ৩৩৩টি। গরু এবং মহিষ মিলে মোট কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮টি। এছাড়া ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি। যার মধ্যে ছাগল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি এবং ভেড়া ৫৮ হাজার ৬৬২টি রয়েছে।
অতীতে এককভাবে কোরবানি দিতেন এমন কয়েকজন কোরবানিদাতার সাথে আলাপকালে শুলকবহর এলাকার মো. সেলিম জানান, তিনি ভাড়া বাসায় থাকলেও মাঝারি আকারের একটি গরু কিনে কোরবানি দিতেন। এবার ভাগে কোরবানি করবেন। অতীতে যেসব মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার এককভাবে একটি গরু নিয়ে কোরবানি দিত, তারা এখন ভাগে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছোট গরু কিনতে গেলেও লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ এমনিতেই দিশেহারা। তাই ভাগে কোরবানি দেয়া ছাড়া উপায় নেই। তাই অন্য বছরের তুলনায় এবার কোরবানির সংখ্যা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাগরিকা গরু বাজারের একাধিক বেপারির সাথে আলাপকালে তারা জানান, উত্তরবঙ্গের বেশকিছু বড় বড় খামারি আছে যারা চট্টগ্রামের বাজারকে লক্ষ্য রেখে গরু মোটাতাজা করে। চট্টগ্রামে যদি চাহিদামত কোরবানির পশু মজুদ থাকে তবুও তারা তাদের মোটাতাজাকৃত গরু-ছাগল নিয়ে চট্টগ্রামে আসে। তাই চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর কোন সংকট হবে না। তাছাড়া মিয়ানমার থেকেও চোরাইপথে কিছু গরু নিয়মিত আনা হচ্ছে। গবাদিপশু খাদ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় এবার গরুর দামও কিছুটা বাড়তি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কাগজে কলমে কোরবানির পশুর ঘাটতি থাকলেও বাস্তবে তা হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় কয়েক বছর ধরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশু দিয়েই চট্টগ্রামের কোরবানি পশুর চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা হচ্ছে। একাধিক খামারির সাথে আলাপকালে তারা জানান, এবার গরু-মহিষের দাম বেশি। বেশি দাম পেয়েও তারা পোষাতে পারছেন না। কারণ গবাদি পশু লালন-পালন অত্যন্ত ব্যয় বহুল হয়ে গেছে। গো-খাদ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করে সরকার দেশের খামারিদের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে খামারিরা কিছুটা লাভবান হতে পারতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৭ হাজার ৫৩৩ জন খামারির কাছে গরু-মহিষ মিলে ১৩ লাখ ৪৬০০টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে। ছাগল এবং ভেড়া ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬৮২টি। চট্টগ্রাম বিভাগে মোট পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ। মজুদ আছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজারের মত। সে হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগে পশুর তেমন ঘাটতি নেই বলা যায়।
পূর্বকোণ/পিআর