৩৩ কোটি টাকা দামের জমির ‘এওয়াজ বদল’ হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশকে সাড়ে ৯ কোটি টাকায় জলাশয় কিনে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বোর্ড সভায় এই জলাশয়টি কেনার বিষয়টি উত্থাপিত হতে পারে। এখন জলাশয় হলেও ভরাটের পর এটি জমিতে পরিণত হবে। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ ‘এওয়াজ বদল’ হিসেবে এই জলাশয় নিতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান জানান, জলাশয়টি নিতে আমরা আগ্রহী নই। যোগাযোগ সুবিধাসম্পন্ন একটি জমি নিতে আমরা চেষ্টা করছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান- বিভাগীয় কার্যালয় করতে সাড়ে চার বছর আগে নগরীর বাকলিয়ায় এক একর জমি কিনে ট্যুরিস্ট পুলিশ। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে জমিটি দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত নিতে ট্যুরিস্ট পুলিশকে গুণতে হয় ৩৩ কোটি ছয়শ’ টাকা। বাকলিয়া সৎসঙ্গ বিহারের বিপরীতে কর্ণফুলী নদীর তীরে জমিটির অবস্থান। ২০১৯ সালে জমিটি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া হয়।
২০২০ সালে কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সিডিএ জানতে পারে মাস্টারপ্ল্যানের জায়গায় ট্যুরিস্ট পুলিশ এক একর জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়েছে। যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে বন্ধ হয়ে যায় সড়কের ওই অংশের নির্মাণ কাজ।
শুরু হয় সিডিএ-ট্যুরিস্ট পুলিশ চিঠি চালাচালি। ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে জমি ‘এওয়াজ বদল’ করতে ২০২১ সালে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সিডিএ চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয় ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সুবিধাজনক স্থানে জমি নির্বাচন করে প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করে নির্বাচিত জমিটি ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে ‘এওয়াজ বদলের’ অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হল।’
এরপর বাকলিয়া সৎসঙ্গ বিহারের বিপরীতে কর্ণফুলী নদী তীরের এক একর জমির ‘এওয়াজ বদল’ হিসেবে হামিদচর এলাকায় এক একর জলায়শ ট্যুরিস্ট পুলিশকে কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সিডিএ। অনুসন্ধানে জানা গেছে- সেলিম নামে এক ব্যক্তি সিডিএকে জলাশয়টি কিনতে ‘সহযোগিতা’ করছেন। জলাশয়টি কিনতে সিডিএ’র খরচ হবে প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা।
অভিযোগ রয়েছে- এক একর জলাশয়ের ক্রয়মূল্য প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে এটি কেনা হচ্ছে ‘অর্ধেকের কম মূল্যে’। সিডিএ’র আগামী বোর্ড সভায় ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য এই জলাশয় কেনার বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ ইতোমধ্যে এই জলাশয় নিতে অনাগ্রহ দেখালেও বোর্ড সভার অনুমোদন নিয়ে জলাশয়টি কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র প্রকৌশলী রাজীব দাশ জানান, হামিদচর এলাকায় একটি জমি ট্যুরিস্ট পুলিশকে দেখানো হয়েছে। তবে জমিটি এখনো রেজিস্ট্রি হয়নি। ট্যুরিস্ট পুলিশ এই জমি নিতে আগ্রহী হলে কিনে দেবে সিডিএ। আগ্রহী না হলে নয়। সৎসঙ্গ বিহার এলাকার জমিটি ইতোমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সেখানে সড়কের কাজ শুরু হয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর