চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময়ে আসা প্রবাসীদের ৮০টি চালানে প্রায় ২৫ টন পণ্য আটকে আছে। যা খালাস নিতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে অনাপত্তিপত্র (ক্লিয়ার পারমিট সংক্ষেপ সিপি) চেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মূলত প্রবাসীদের চালানে একশ’ কেজির বেশি পণ্য থাকায় ওইসব চালাসের পণ্য খালাস বন্ধ রেখে অনাপত্তিপত্র চাওয়া হচ্ছে।
গত মে মাসে প্রবাসীদের পাঠানো চট্টগ্রাম কাস্টমসের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইট ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার মো. আহসান উল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওই অনাপত্তিপত্র দাখিলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৩০ দিনের মধ্যে অনাপত্তিপত্র দাখিল করতে না পারলে তা কাস্টমস আইন অনুযায়ী ওই পণ্য নিলামে চলে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রবাসীদের দাবি, প্রবাসীরা ৩ থেকে ৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে তারা পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে জমিয়ে রাখে। যাতে দেশে যাওয়ার সময় পরিবারের জন্য ওইসব পণ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া যায়। তবে দিন দিন প্রবাসীদের কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে প্রবাসীদের আনা পারিবারিক ব্যবহারের কার্গো পণ্য ও কার্গো ফ্লাইট চিরতরে বন্ধ করে দেবার চক্রান্তের অংশ হিসেবে সিপি দাখিলের এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত রমজান এবং ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠালেও প্রবাসীরা সেগুলো খালাস নিতে পারেনি। কাস্টমসের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে গত মঙ্গলবার (৬ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
এদিকে, প্রবাসীদের পণ্য খালাসে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানায়, প্রবাসীদের পণ্য খালাস নিতে না পারায় প্রতিদিন বাড়ছে বিমানবন্দরের ওয়্যারহাউস চার্জ। এমনকি দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে প্রবাসীদের আনা পণ্য। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন বিমানবন্দরের সক্ষমতা নিরুপণ করে প্রতিবেদন দেয়। বিমানবন্দরের সক্ষমতার বড় একটি অংশ কার্গো পরিবহন, কার্গো ওয়্যারহাউসের সক্ষমতা। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ থাকায় এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কাছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পণ্যবাহী কার্গো বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বাংলাদেশ বিমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের আয় কমেছে। গত কয়েক মাসে অন্তত ২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে বলে দাবি করে দুটি বিদেশি বিমান সংস্থার সূত্র।
কার্গো ফ্লাইট ও পণ্যখালাস বন্ধ থাকার কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসাথে বিলম্ব মাসুল যুক্ত হওয়ায় অনেক প্রবাসী নিজেদের পণ্য খালাস নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। শুধু গেল বছরের ডিসেম্বরে ওয়্যারহাউসের বিলম্ব মাসুলবাবদ বিমানবন্দরে আয় হয়েছিলো ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য মতে, ইমপোর্ট কার্গো থেকে ২০২২ সালের জুনে বিমানবন্দর কার্গো ওয়্যারহাউস থেকে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৩ টাকা আয় হয়েছে। একই বছরের জুলাই মাসে ৩২ লাখ ২২ হাজার ৩৪২ টাকা, আগস্টে ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬২ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪ টাকা, অক্টোবরে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ টাকা, নভেম্বরে ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৭ টাকা আয় হয়। বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার পর ডিসেম্বর মাসে পণ্য খালাস চালু হলে ওই মাসেই ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৪ টাকা রাজস্ব আয় হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। আর কার্গো খালাস বন্ধ থাকার কারণে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আয় নেমে আসে চার লাখ টাকায়। চলতি বছরের মার্চ মাসে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা।
পূর্বকোণ/পিআর