নদী পথে অপরাধ দমনে ১১ বছর আগে গঠিত নৌ পুলিশ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি থানা ও নয়টি নৌ ফাঁড়িতে নেই চাহিদা অনুযায়ী নৌ-যান। যে কয়টি নৌ-যান রয়েছে তা নিয়ে গভীর সমুদ্র কিংবা বঙ্গোপসাগরের আউটারে যাওয়া যায় না। কোথাও ভাড়া বাসা, কোথাও পরিত্যক্ত ভবন আবার কোথাও আশ্রয় কেন্দ্রে চলছে নৌ পুলিশের কার্যক্রম। রয়েছে জনবল সংকট। চট্টগ্রামসহ চার জেলার ছোট বড় ১৫টি নদীসহ উপকূলীয় এলাকায় অপরাধ দমনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের উপর। নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধীনে রয়েছে একটি থানা। আটটি নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। এছাড়া হালদা নদী নজরদারিতে রাখতে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিস্তীর্ণ নৌ পথে চলাচল করতে এসব ফাঁড়িতে নৌ-যান রয়েছে সাতটি। এরমধ্যে একটি নষ্ট। মাদক পাচারের অন্যতম রুট চট্টগ্রাম, আনোয়ারা, সীতাকু- ও টেকনাফ উপকূলীয় এলাকা। এ এলাকায় রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। অথচ চট্টগ্রাম জোন অফিস, চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র নৌ থানা ও চারটি এলাকার ফাঁড়িতে কোন নৌ যান নেই।
চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের অধীন জেলাগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, হালদা, মেঘনা, ইছামতি, শঙ্খ, ফেনী নদীসহ ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫টি নদী ও হ্রদ রয়েছে। সেসব নদীতে নিয়মিত অভিযানে যেতে হয় নৌ পুলিশের।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন জানান, বিভিন্ন নদ-নদীতে চোরা শিকারীরা জাল পেতে রেখে মা ও পোনা মাছ নিধন করে। এসব প্রতিরোধ করে মা মাছ ও পোনা মাছ রক্ষায় নিয়মিত অভিযানের বিকল্প নেই। কিন্তু অভিযানে যেতে ভাড়া করা নৌ-যানই ভরসা।
পুলিশ সুপার নিজাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কেন্দ্রিক নৌ পথ নিরাপদ রাখতে কাজ করছে নৌ পুলিশ। নৌ-যান সংকট তো রয়েছে। গভীর সমুদ্র ও আউটারে চোরাচালান কিংবা নানা অপরাধের গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে আসে। কিন্তু চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস এবং মহেষখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে যে দুটি স্পিটবোড রয়েছে তা নিয়ে সাগরের আউটার কিংবা গভীর সমুদ্রে যাওয়া যায় না। চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে নৌ পুলিশের আওতাধীন যে নৌ পথ রয়েছে তা নিরাপদ রাখতে অত্যাধুনিক নৌ-যানের বিকল্প নেই। সীমিত সম্পদের মধ্যে নদীপথ নিরাপদ রাখতে আমারা চেষ্টা করছি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার ও রাঙামাটি জেলা নিয়ে গঠিত নৌ পুলিশের অধীনে একটি থানা ও আটটি ফাঁড়ি এবং একটি অস্থায়ী নৌ পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। সেগুলো হলো, সদরঘাট নৌ থানা, কুমিরা, আনোয়ারা বার আউলিয়া ঘাট, চকরিয়া বদরখালী, কক্সবাজারের মহেষখালী, টেকনাফ, নোয়াখালীর হাতিয়া নলচিড়া, নিঝুমদ্বীপ ও রাঙামাটি সদর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। এছাড়া হালদা নদী নজরদারিতে রাখতে হালদা অস্থায়ী নৌ পুলিশ ক্যাম্প। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জোন অফিস, সদরঘাট নৌ থানা, কুমিরা, বার আউলিয়া, বদরখালী, টেকনাফ ফাঁড়িতে নেই স্পিড বোড। নলচিড়া ফাঁড়িতে একটি স্পিডবোড থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। বদরখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়া বাকি ফাঁড়ি ও একমাত্র থানা কার্যক্রম ভাড়াবাসা, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র এবং পরিত্যক্ত ভবনে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে । একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নৌ পুলিশের জনবল রয়েছে ১২৯ জন। নদীপথে অপরাধ দমন প্রতিরোধে টহলের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ উদ্ধারে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে নৌ পুলিশকে। কয়দিন পর পর নদীতে পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ। গত এক বছরে নৌ পুলিশ ৪৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে সদরঘাট নৌ থানায় উদ্ধার হয়েছে ৩৪টি, কুমিরা ফাঁড়িতে ১০টি, বার আউলিয়া ফাঁড়িতে একটি, নোয়াখালীর নলছিড়া ফাঁড়ির হাতিয়াতে একটি ও মহেষখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ৪৭ মৃতদেহের মধ্যে ৩৪টির পরিচয় শনাক্ত করা গেলেও ১৩ মৃতদেহের পরিচয় মিলেনি।
চট্টগ্রাম নৌ থানার পরিদর্শক (ওসি) একরাম উল্লাহ জানান, সীমিত জলযান ও জনবল নিয়ে নৌ পথ নিরাপদ রাখতে আমরা চেষ্টা করছি। মা মাছ ও মাছের পোনা শিকার প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। নদী পথে অভিযান চালাতে স্পিডবোডের বিকল্প নেই। সদরঘাট নৌ থানায় স্পিটবোড নেই। তবে ভাড়া করা দেশীয় তৈরি ইঞ্জিন বোড নিয়ে নদীতে নিয়মিত টহল দেয় নৌ পুলিশ।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথে চোরাচালান ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নদী সম্পদ রক্ষার শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পূর্বকোণ/পিআর