শত বছরের বেশি সময় ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে কোনমতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল দামপাড়া পুলিশ লাইন বিভাগীয় হাসপাতালের দ্বিতল ভবনটি। বয়সের ভারে ভবনের দেয়াল থেকে খসে পড়ছিল পলেস্তরা। খুলে পড়েছে জানালার রড, দরজার চৌকাঠ। সুদৃষ্টিতে ফিরে তাকায়নি কেউ। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল শত বছরের পুরনো কাঠের দরজা, জানালা। এ ভবনের চারটি কক্ষে কোনমতে খুঁড়িয়ে চলতো বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের কার্যক্রম। অনেকটা অনাদর আর অবহেলায় বছরের পর বছর পড়ে থাকা এ দালানের যৌবন ফিরিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) মাহবুবর রহমান। লাল রঙের এ দালান শত বছরের পরে ফিরে পেয়েছে হারানো যৌবন। শুধু সংস্কার নয়। মূল ভবনের ঐতিহ্যগত অবকাঠামো অবিকল রেখে করা হয়েছে আধুনিকীকরণ। করা হয়েছে ভবনের শোভাবর্ধন। একটু চেষ্টাতেই পুলিশ লাইনে সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন ভবনে পরিণত হয়েছে লাল রঙের এ দালান। নাম দেয়া হয়েছে ‘হেরিটেজ’ ভবন। ইতিহাসের স্বাক্ষী পুলিশ লাইনের বিভাগীয় হাসপাতাল রূপান্তরিত হয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতালে। করোনা মহামারীতে হাসপাতালটিকে করোনা ডেটিকেটেড হাসাপাতাল হিসাবে ব্যবহার করেছে নগর পুলিশ।
আধুনিকায়নের পর যৌবন ফিরে পাওয়া দ্বিতল লাল ভবন ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান। পরে ভবনের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন সিএমপি কমিশনার।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) ময়নুল ইসলাম জানান, ১৯১৫ সালে নির্মিত এ ভবনটি পুলিশ লাইন্স বিভাগীয় হাসপাতাল ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের চারটি কক্ষ কোনমতে ব্যবহার করা হতো। অন্য কক্ষগুলো ছিল ব্যবহার অনুপযোগী। বর্তমান পুলিশ কমিশনার ভবনটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন। মূল ভবনের অবকাঠামো অবিকল রেখে মেরামত করা হয়েছে ৪৫টি কাঠের দরজা- ৮১টি কাঠের জানালা। জানালার যেখানে রড ছিল না সেখানে দেয়া হয়েছে রড। দরজার যে অংশে কাঠ ভেঙে গিয়েছিল সেখানে পুরনো ডিজাইন ঠিক রেখে লাগানো হয়েছে কাঠ। এমনকি শত বছর আগে দরজা জানালায় যে রঙ লাগানো হয়েছিল ঠিক রাখা হয়েছে তাও। মেঝ থেকে ছাদের উচ্চতা ১৮ ফুটের প্রতিটি কক্ষ ছাদ ছুঁয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে স্যাঁতস্যাঁতে থাকলেও এখন আর তা নেই। পুরো ভবনের চারপাশে লাগানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, বসানো হয়েছে দৃষ্টি নন্দন টাইলস, আধুনিক বেসিন।
কোন কক্ষে শোভা পাচ্ছে ইসিজি মেশিন, আবার কোন কক্ষে এক্সরে মেশিন। দ্বিতল এ ভবনে পরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে ৫০টি শয্যা। পুলিশ সদস্যদের করোনার স্যাম্পল নেয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সেখানে। লাল ভবনটি এখন আর অবহেলিত নয়। পুলিশ সদস্যদের কাছে বেড়েছে তার কদর।
এডিসি ময়নুল জানান, এক্সরে কিংবা ইসিজি ছাড়াও নারী আর শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। একজন সিনিয়র চিকিৎসকের সুবিধার্থে ছয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকবেন সেখানে।
গতকাল মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নগর পুলিশ কমিশনার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান্) এস এম মোস্তাক আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ ও অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) আমির জাফর।
পূর্বকোণ/এএ