চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

দিন গড়াতেই বাড়ছে উত্তাপ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

১০ জানুয়ারি, ২০২১ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

সহিংসতা দিয়ে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরশন (চসিক) নির্বাচনের প্রচারণায় উত্তাপ বাড়ছে। দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর প্রধান কার্যালয়ে শ্রমিক লীগের দুই পক্ষের উত্তেজনা, মারামারি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে সংঘাত ছাড়াও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মাইক ভাঙচুর, হামলা ও পোস্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠেছে।

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় মহানগর শ্রমিক লীগের একটি অংশ দলবল নিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে যায়। নৌকা প্রতীকের পক্ষে মতবিনিময় সভার শুরুতে শ্রমিক লীগের ‘সভাপতি’ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কের এক পর্যায়ে সভাপতি দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর চেয়ার কেড়ে নেন শ্রমিক লীগের বখতেয়ার উদ্দিন খান। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হাতাহাতি শুরু হয়। শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করা হয়। শ্রমিক লীগ নেতা নূরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘বখতেয়ার উদ্দিন ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেয়। সভাপতির চেয়ার কেড়ে নেয়। চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে তছনছ করা হয়। বিষয়টি আমরা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে অবহিত করেছি। নির্বাচনের সময়ে মারামারি না করার অনুরোধ করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের অনুরোধে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাই।’ হামলার প্রতিবাদে বাইরে  এসে আমরা প্রতিবাদ সভা করেছি।

শ্রমিক লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে সংঘাতের ঘটনা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়াও প্রচারণার প্রথম দিন নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় চকবাজার এলাকায় ছাত্র ও যুবলীগের দুই পক্ষের সহিংসতায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে নৌকার প্রচারণা প- হয়ে যায়।

এদিকে, নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গতকাল থেকে মাঠে নেমেছেন ১৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সংঘাত ছাড়াও গতকাল নগরীর বাগমনিরাম, দক্ষিণ হালিশহর, পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মাইক ভাঙচুর, প্রচারে বাধা, পোস্টার ছিড়ে ফেলা ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন।

বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মিডিয়া কমিটির সদস্য সচিব ও নগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী পূর্বকোণকে বলেন, বিএনপি মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রচার মাইক ভাঙচুর, হামলা ও বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। হামলার ঘটনায় বাকলিয়ায় তিন কর্মী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার জন্য সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন তিনি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করা হবে।

বিএনপি দাবি করেছে, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের পল্টন মোড়ে বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হয় এবং পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পোস্টার বহনকারী ভ্যান গাড়ি নিয়ে যায়। ভ্যানটি ফেরত দেয়নি। দুপুর ১২ টায় ২৬ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের হালিশহর বি-ব্লক এলাকায় মহিলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। সমাবেশ শেষে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করে স্থান ত্যাগ করার পর হামলা চালায়। এতে মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক আঁখি সুলতানাসহ দলের কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়ার ওয়াজাইর পাড়ায় প্রচারণাকালে হামলা চালিয়ে সিএনজি ট্যাক্সি ও মাইক ভাঙচুর করা হয়। এতে ছাত্রদলকর্মী শেতাফ আহমেদ, যুবদলকর্মী মোহাম্মদ ফারুক ও ট্যাক্সিচালক জাকের হোসেন আহত হন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ইদ্রিস আলী দাবি করেন, প্রচারণার শুরুতে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘাতের ঘটনায় মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষের ভোটারাধিকার হরণ করেছে। এই কারণে ভোটাররা ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে পড়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট