চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা

মো সাঈদী আলম

১০ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো ইরানের এলিট ফোর্স আল কুদসের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাসেম সোলামাইনি হত্যা। যাকে ইরানের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলা হয়। সোলাইমানিকে ইরানের ধর্মীয় নেতা ঈমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনীর পরে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হিসাবে ভাবা হয়। বাগদাদের একটি বিমান বন্দরের অদূরে তাকে হত্যা করা হয়। সাথে ছিলেন সুলাইমানির বিশ্বস্ত মিত্র ইরাকের পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডারসহ আট জন। এখন ইরান, ইরাকে চলছে শোকাহত লাখো মানুষের বিক্ষোভ। প্রতিশোধের আগুণে জ্বলছে ইরানের রাজপথ। জানাজায় শরিক হয়েছে লক্ষ লক্ষ জনতা। তেহরান ইরাকে দুটি মার্কিন ঘাটেতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাড়াঁনোর ঘোষণা দিয়েছে। ইরাকের পার্লামান্টে বহিরাগত সেনা বহিস্কারে প্রস্তাবনা পাস হয়েছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন প্রতিশোধের আশঙ্কায় ইরানের ৫২টি স্থাপনায় হামলা চালানোর নিশানা বানিয়েছে। দু’ পক্ষই যদি এমন আচরণ করে তাহলে যুদ্ধ অনিবার্য। তবে আশার কথা ইরান সফর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর যুদ্ধ না করার কথা জানিয়েছে।

ট্রাম্প যেটা করেছেন একপেশে সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যে। যেটাতে পুরো আমেরিকাকে উদ্ধিগ্নতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। স্বয়ং ট্রাম্পের দেশেও বিক্ষোভ হচ্ছে যুদ্ধ নয়। নিজ দেশে একঘরে হয়ে পড়ছে ট্রাম্প। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ ইসরাঈলও আতঙ্কে ভুগছে। তাদের সীমানায় সতর্কতা জারি করেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন সোলেমানি হত্যাকা- আমেরিকার চরম ভুল। রাশিয়া-জার্মান বৈঠকে মিলিত হচ্ছে ইরান ইস্যু নিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। কাসেম সোলাইমানি নিহত হবার পর পরেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪%। হরমুজ প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে ইরান। যেটা দিয়ে বিশ্বের তেল রপ্তানির এক-পঞ্চমাংশ যাতায়াত হয়। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু মিত্র দেশ আমেরিকার পাশে দাঁড়ালেও ইরানের পাশে থাকবে রাশিয়া, চীন, তুরস্কের মত দেশগুলো। ফলে যুদ্ধ এক স্থানে থেমে থাকবে না। ছড়িয়ে পড়বে সারাবিশে^। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিক থাকায় এতে বাংলাদেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। উল্লেখ্য, ইরানের সাথে আমেরিকার দা-কুমড়ার সম্পর্ক চার দশক আগ থেকেই। ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই আমেরিকা ইরানকে ধংসের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু পারছে না। ইরান-ইরাক যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনকে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার হাত বাড়ায়। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর নিষেধাঙ্গা আরোপ করে। সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ারর পর ২০১৩ সালে বারাক ওবামা ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি করেন ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি নিয়ে। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৯ সালের মে মাসে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেন। ইরানের ওপর নিষেধাঙ্গা আরোপ করেন। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে ইরানি জেনারেলকে হত্য করে।

এতে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তৈরি হয় অস্থিরতা। যে কোন সময় যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছে যুদ্ধ শেষ করতেই তারা এ হামলা চালিয়েছে। আদৌ কি যুদ্ধ শেষ হবে নাকি দাবানলের মত চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে তা সময়ে বলে দিবে। আমেরিকা অপরদিকে ইরানের নিষেধাঙ্গা তুলে নেবার প্রস্তাবও পাঠিয়েছে ভিন্ন মারফতে, যদি তারা প্রতিশোধ না নেয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় দেশে কমবেশী আমেরিকার ঘাটি রয়েছে। আজকে পুরো মধ্যপ্রাচ্য রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। কখনো আইএস, কখনো কুর্দি, কখনো হুতি, কখনো ইয়াজিদি, কখনো হিজবুল্লাহ, কখনো হামাস ইত্যাদি। আগে দু’বার সোলাইমানিকে কাছে পেয়েও হত্যা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কেনো ট্রাম্প তা করলো। এর কোনো সদুত্তর নেই। যুক্তরাষ্ট্র বলতে চাইছে এ হামলার মধ্য দিয়ে বড় ধরণের হামলার পরিকল্পনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, কাসেম সোলাইমানি আইএস দমন, সিরিয়ার সরকার টিকিয়ে রাখা, হুতি বিদ্রোহিদের সহায়তা, ইরানকে সামরিক শক্তি দিক দিয়ে শক্তিশালি করে তোলাসহ নানা ক্ষেত্রে সোলেমানির ভূমিকা রয়েছে। তাই ট্রাম্প তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, সোলেমানি হত্যার পর যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তা কি ট্রাম্প সহজেই সামাল দিতে পারবেন?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট