‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে, পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’। পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের এ ছড়ায় ফুটে উঠেছিল গ্রামীণ খাল ও নদীর প্রবাহমান চিত্র। গ্রামীণ মেঠো পথে হাঁটতে গেলে যার অহরহ চিত্র দৃশ্যায়িত হয়।
কবির ওই ছড়ার সূত্র ধরে বলতে হয়, সেই কালের কবির চিন্তাধারা বর্তমানে ভিন্নতা রূপ নিয়েছে। কবির সেই কাল্পনিক ভাষায় খাল দিয়ে গরু ও গাড়ি পার হওয়ার দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।
চট্টগ্রাম জেলার সর্বশেষ প্রান্ত ও কক্সবাজার জেলার সূচনালগ্নে আঁকা-বাঁকায় প্রবাহিত অতি পরিচিত ছনুয়া খাল। ছনুয়া ও পার্শ্ববর্তী রাজাখালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে ১৫০ মিটারের প্রস্থ ওই খালটি। এই খালের উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি শত বছরের হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে মান্দাতার আমলের ডিঙ্গি নৌকা নিয়েই ঝড়-বৃষ্টি ও বিপদ সংকেত উপেক্ষা করে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেকই। উপকূলীয় এলাকা হওয়াতে পারাপারের ঝুঁকি যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।
ছনুয়া ইউনিয়নের (১ নং ওয়ার্ড) ছেলবন এলাকার অদূরে ছনুয়া খাল পার হয়ে প্রতিদিন যাতায়ত করেন রাজাখালী আরবশাহ বাজার, রাজাখালী বেশারতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা, ফয়েজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের কয়েকটি মক্তব, ফোরকানিয়া মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ।
স্থানীয় নুরুল আলম জানান, ছনুয়া খাল পারাপারে প্রতিদিন ঝুঁকি থেকে যায়। গত এক মাসে ৮/১০ জন আহত হয়েছে। বৃষ্টির দিনে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখানে সেতু নির্মাণের দাবি শত বছরের।
ছনুয়া উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. সরোয়ার বলেন, ছনুয়া উন্নয়ন পরিষদের কর্মীদের সহায়তায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে এলাকার মানুষ কাঁদা মাটি মাড়িয়ে চলাচল করতে না হয় সেই ব্যবস্থাও চলমান রয়েছে।
বাঁশখালী ছনুয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি লায়ন আমিরুল হক এমরুল বলেন, দৈনিক ৮-১০ হাজার মানুষ পারাপারে ছনুয়া খালটির উপর গাডার সেতু নির্মাণের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব তহবিল ও জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রস্তাবিত সেতুর বিপরীতে বাঁশের সাঁকু নির্মাণ করে ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ ছনুয়া খাল পারাপারের কাজ চলমান রয়েছে। এলাকার জনগণ শীঘ্রই এ সুফল ভোগ করবেন বলেও জানান তিনি।
পূর্বকোণ/পিআর