আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে উত্তর বঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পশু আসতে শুরু করে নগরীর বিবিরহাট গরু বাজারে। কোরবানি উপলক্ষে গতকাল (শনিবার) বিকেলের পর বিবিরহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে বাজারে ক্রেতা আসলেও বেচাকেনার দৃশ্য ছিল কম। শনিবার বিকেল থেকে ক্রেতা বাজারমুখী হচ্ছেন এবং গরু বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে, গত বছরের তুলনায় এবার গরু প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে করছেন ক্রেতারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন আনারুল ইসলামসহ আরো ৬জন। ২০টি গরু রাখার জন্য খাইন বাবদ দিতে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। গত বছর যেখানে ৩৮ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে, এখন সেখানে ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা। এছাড়া, গো খাদ্যের দামও বেড়েছে দফায় দফায়। গত বছরের তুলনায় গরুর দাম বেশি কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গো খাদ্য, গাড়ি ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় গরুর দামও কিছুটা বেড়েছে।
গত ছয় বছর ধরে মাগুরার শ্রীপুরের কাজলি গ্রাম থেকে গরু নিয়ে বিবিরহাট গরু বাজারে আসছেন মো. মফিজুর রহমান। এবারও মফিজসহ ৬ জন মিলে একই এলাকা থেকে ৪৫টি গরু নিয়ে এসেছেন।
জানতে চাইলে মো. মফিজুর রহমান বলেন, এখনো ক্রেতারা দাম হাকাচ্ছেন না। দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি রবিবার (আজ) থেকে বাজার জমে উঠবে। গত বছর ৩০টি গরু এনেছি, যার সবগুলোই বিক্রি হয়েছে। আশা করছি, এবারও সবগুলো গরু বিক্রি হবে।
গত শুক্রবার গরু কিনতে এসে না কিনে বাসায় ফিরে গিয়েছেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। গতকাল (শনিবার) বিকেলে ছেলেকে নিয়ে আবার এসেছেন বিবিরহাট গরু বাজারে।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। শুক্রবারও এসে দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারিনি। আজ শনিবার এসেছি। গরুর দাম দেখছি। প্রতি গরুতে গত বছরের চেয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা বেশি মনে হচ্ছে।
গত পাঁচ বছর ধরে বিবিরহাট গরুর বাজারে কোরবানির পশু নিয়ে আসেন যশোরের মহেশপুর থানার সুশীল কুমার অধিকারী। তিনি জানান, গত শুক্রবার তারা একই এলাকা থেকে ৫ জন মিলে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন। গত বছরের তুলনায় গরুর দাম কেমন মনে হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিগত বছরের তুলনায় গরুর দাম বেড়েছে এটা সত্যি। তবে গো-খাদ্যের দামও একইভাবে বেড়েছে। যদি আগের তুলনায় বাড়তি দামে গরু বিক্রি না হয়, তাহলে আমাদের কারোরই পোষাবে না। লস দিয়ে তো কেউ গরু বিক্রি করতে পারবে না।
বিবিরহাট গরু বাজার ব্যবসায়ী মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, শুক্রবার থেকে বাজারে গরু আসা শুরু করেছে। সেই সাথে কিছুটা বিক্রিও হচ্ছে। শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১০০ গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
জানতে চাইলে পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বলেন, এবার বিবিরহাট গরু বাজার সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। বিবিরহাটে ভিতরে খাইন রয়েছে ১০৪টি। প্রতিটি খাইনে ২০টি গরু বাধা যায়। সে হিসেবে শুধুমাত্র ভিতরেই ২ হাজার ৮০টি গরু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। মাঠের ভেতরে যে খালি অংশ রয়েছে, সেখানে আরো ৫০টি মত খাইন বা এক হাজার গরু রাখার জায়গা রয়েছে। এছাড়া রেল লাইন ও আশপাশে আরো ১ হাজার গরু উঠেছে। এখনো পর্যন্ত সবমিলে প্রায় ৩ হাজারের মত গরু উঠেছে। তবে আমরা আশা করছি, আগামীকাল (আজ রবিবার) প্রায় ১০ হাজারের মত গরু বাজারে উঠবে।
পূর্বকোণ/এএইচ