চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকলেও মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। জনপ্রতিনিধিরা আসে যায়। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা মেলা ভার! প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বরাদ্দ হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বৃষ্টি কিংবা বর্ষায় মানুষকে ঠিকই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ভিন্নধর্মী এক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন তিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী। তাদের দাবি, নগরীর বিভিন্ন স্থানের জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে তাদের তৈরি প্রজেক্ট। এই তিন ক্ষুদে বিজ্ঞানী হলেন জয়দ্বীপ চৌধুরী, রোহিত বিশ্বাস ও অমিত দে। এরা চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড’স স্কুল এন্ড কলেজে পড়ুয়া দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন বন্ধু উদ্ভাবন করেছেন ‘আন্ডার রোড ড্রেনেজ সিস্টেম’। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত ‘চিটাগং সাইন্স কার্নিভাল-৩.০’ এ নিজেদের উদ্ভাবিত প্রজেক্ট প্রদর্শন করেন তারা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাইন্টিফিক সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত সাইন্স কার্নিভালে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রতিভার জানান দিলেন ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীরা। নিজেদের উদ্ভাবিত প্রজেক্ট সম্পর্কে রোহিত বিশ্বাস বলেন, আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহরে হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। রাস্তার পাশে ড্রেনেজ সিস্টেম থাকলেও সেটা অনেকাংশে বিভিন্ন আবর্জনায় পূর্ণ থাকে। তাছাড়া শহরের খাল, জলাশয় বেদখল হয়ে যায়, ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়। এমন বাস্তবতায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি উঠে যায়। এতে জনজীবনে দেখা যায় ভোগান্তি। আমাদের এই প্রজেক্টের আওতায় ড্রেনেজ সিস্টেম থাকবে রাস্তার নিচে। রাস্তায় জমা বৃষ্টির পানি এই ড্রেনে গিয়ে পড়বে। পরে সেটা নদী বা জলাশয়ে অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে। এতে জলাবদ্ধতা তৈরির সম্ভাবনা থাকবে না।
চিটাগং সাইন্স কার্নিভালে অংশ নিয়ে আরও প্রজেক্ট উদ্ভাবনের কথা জানালেন তারা। এ বিষয়ে অমিত দে বলেন, আমরা তিন বন্ধু একত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের আরও কিছু প্রজেক্ট আছে। শিল্প এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের একটি প্রজেক্ট আছে। আরও আছে রেল লাইনের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং পাহাড়ি রাস্তায় নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিতে একটি প্রজেক্ট আছে।
নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে ফান্ড প্রয়োজন উল্লেখ করে টিম লিডার জয়দ্বীপ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রজেক্টগুলো গণমানুষের কল্যাণের জন্য তৈরি। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চাই। এজন্য দাতা সংস্থাগুলো থেকে সহায়তা ফেলে আমাদের প্রজেক্টের কাজ আরও এগিয়ে নিতে পারবো।
এর আগে সকাল ১১টায় অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সাইন্স কার্নিভালের আলোচনা সভা। এতে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদ হোসেন, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, চবি সাইন্টিফিক সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান ও অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা (আঁখি) প্রমুখ।
আলোচনা সভার পরে ‘নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার ও সম্ভাবনা’ প্রেক্ষিত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন সৌরশক্তি গবেষক ও বিজ্ঞানী এবং ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নওশাদ আমিন।
পূর্বকোণ/এসি