বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে চট্টগ্রামে নতুন ‘আপদ’ দেখা দিয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ঘিরে। এতদিন দিনে এক কিংবা দু’জন করে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও হঠাৎ করেই যেন চোখ রাঙাতে শুরু করেছে মশাবাহিত এ রোগটি। শুধুমাত্র গেল একদিনেই নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ২২ জন। যা চলতি বছরে একদিনে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ।
এদিকে, হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় তাতে উদ্বিগ্ন খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ। যদিও সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে মশা নিধনে তৎপর হওয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের শুরু থেকে গেল ১৪ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৯ জন। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন এবং জুন মাসে গেল ১৪ দিনে শনাক্ত হয় ৭৯ জন। এছাড়াও জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হলেও পরবর্তী চার মাসে কোন মৃত্যু হয়নি। তবে চলতি মাসের গেল বুধবারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে চার জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যা ১৩১ জন, নারী ৫৮ জন এবং শিশু রোগী হচ্ছে ৭২ জন। আর মৃত্যু রোগীর মধ্যে তিনজনই শিশু বাকি একজন পুরুষ। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গেল মে পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ১৮২ জন। আর গত বছরের একই সময়ে রোগী শনাক্ত হয় মাত্র ১৭ জন। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ গুণ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি বছরেই।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু। তাই মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার উৎপাত বাড়ে। এ সময় এই মশার দংশনে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। তাই বৃষ্টি হলেও বাসা-বাড়িসহ চারপাশের আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
পূর্বকোণ/এসি