জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে এবার জাপা চট্টগ্রাম দক্ষিণের রাজনীতিতে। রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের পন্থীদের পাল্টাপাল্টি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনীতির আলোচনায় এখন জাতীয় পার্টি। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ১২৫ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা দেয় জাপা। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিুবুল হক স্বাক্ষরিত এ কমিটিতে মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা সরকারকে আহ্বায়ক ও আবদুস সাত্তার রনিকে সদস্য সচিব করা হয়। ওই কমিটিকে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করতে বলা হয়েছে। এ কমিটি ঘোষণার পরপরই দক্ষিণ জেলার প্রয়াত সভাপতি সামশুল আলম মাস্টারের অনুসারীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলেন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৪ সালে দলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে সামশুল আলম মাস্টারকে সভাপতি ও মোহাম্মদ নুরুচ্ছাফা সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকে সামশুল আলম মাস্টারের সঙ্গে নুরুচ্ছফা সরকারের বিরোধ দেখা দেয়। পরে নতুন করে কমিটি গঠন করতে দুই বার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু নেতা-কর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে সম্মেলনের আয়োজন ব্যর্থ হয়। গত বছরের জুলাইয়ে মারা যান সামশুল আলম মাস্টার। এর প্রেক্ষিতে তৃতীয়বারের মতো সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেছে দলটি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নুরুচ্ছাফা সরকার ও সদস্য সচিব আবদুস সাত্তার রনি গত ৩১ মে রাতে পটিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির ৬১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও গত মঙ্গলবার (৬ জুন) ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পটিয়া পৌরসভা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন দেয়। ঘোষিত উপজেলা কমিটিতে জাপা নেতা ফরিদ আহমদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও মোহাম্মদ হান্নান চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। পৌরসভার কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে আবদুর রহমান বাবুলকে ও এটি এম শাহাদাৎ ইসলাম শাহেদকে করা হয়েছে সদস্য সচিব।
এদিকে দক্ষিণের এ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে দলের একাংশের নেতাকর্মীরা একটি পাল্টাপাল্টি দক্ষিণ জেলা জাপার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি (রওশন সমর্থিত) ঘোষণা করেছেন। গত ৮ জুন (বৃহস্পতিবার) পটিয়া বাস স্টেশনস্থ দক্ষিণ জেলা কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে আত্মপ্রকাশ করেছে এ কমিটি। এতে দক্ষিণ জেলার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম কমিশনারের নাম ঘোষণা করা হয়।
প্রেস বিফিংয়ে নেতা-কর্মীরা বলেন, দক্ষিণ জেলার কমিটিতে প্রয়াত সামশুল আলম মাস্টারের অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। দলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রে অবহিত করা হলেও এর কোন সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। পরবর্তীতে উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি গঠন করা হলে সেখানেও নুরুচ্ছাফা সরকারের ইশারায় শামশু মাস্টারের অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
সদ্য গঠিত দক্ষিণ জেলা (আমান-নুরুল ইসলাম) সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গত ১১ জুন পটিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে। এতে কাজী খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও ফয়জুল কবির চৌধুরী টিটুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নুরুচ্ছাফা সরকার বলেন, তারা যে কমিটি ঘোষণা করেছে তার কোন বৈধতা নেই। পাল্টা কমিটি করে রওশনপন্থী ঘোষণা দিয়ে তারা রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তবে কিছুতেই দলের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রে দলের দুটি পক্ষ থেকে পৃথকভাবে তালিকা দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকা সমন্বয় করে বিভাগীয় সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী আমাদের এ কমিটি করেছেন। দল সেটি অনুমোদন দিয়েছে। এখানে কাউকে বাদ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
পূর্বকোণ/এএইচ