ফখরুল আরেফিন দিহান, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান দিহান বাবা-দাদার হাত ধরে কোরবানির হাটে যেতেন। করোনা মহামারির পর থেকে সেই চিরায়ত প্রথা বদলে খামার থেকেই কেনেন কোরবানির পশু।
গতকাল (শুক্রবার) ছোট ভাই মুনতাসির আরেফিন আইনানকে নিয়ে কোরবানির পশু দেখার জন্য যান কর্ণফুলী নদীর ওপারে শিকলবাহা গ্রামে। দিহান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে বন্ধুর খামার শাহ আমানত এগ্রো থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনে আসছি। এবারও সেই খামার থেকে ১২ লাখ টাকা দামে চারটি গরু কিনেছি। গরুগুলো খামারেই থাকবে। ঈদের কয়েকদিন আগে বাড়িতে আনা হবে। তাদের পরিবার মাঝে-মধ্যে খামারে গিয়ে গরুগুলো দেখে আসেন।’
শাহ আমানত এগ্রোর মালিক তরুণ উদ্যোক্তা মো. আকতার হোসেন (জেসি) বলেন, ‘৫ কানি জমির ওপর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতি বছর কোরবানি উপলক্ষে শতাধিক গরু লালন-পালন করে বিক্রি করা হয়। এবার ৮০টি গরু পালন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অন্তত ৪০টি গরু বিক্রি করা হয়েছে। অনেক ক্রেতা গরু কেনার পর খামারে রেখে দেন। কোরবানির আগে নিয়ে যান।’
তরুণ উদ্যোক্তা মো. আকতার হোসেন বলেন, ঢাকার এক ক্রেতার কাছে একটি গরু আট লাখ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এখনো গরুটি নিয়ে যাননি তিনি। সর্বোচ্চ ৬-৭ লাখ টাকার দামে গরু রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, কোরবানির পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু সংগ্রহ করে লালন-পালন করা হয়। বেশির ভাগ গরু অনলাইনে বিক্রি করা হয়।
খামারে লালিত গরু খামারেই বিক্রি করা হয় উল্লেখ করে জেসি বলেন, গত বছর নগরীর নূর নগর হাউজিং মাঠে দুটি গরু নিয়ে কোরবানির পশুর হাটে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় আবার খামারে ফেরত নিয়ে এসেছেন।
কোরবানির ঈদ এখনো এক মাসের বেশি সময় রয়েছে। কিন্তু খামারে খামারে প্রস্তুতি চলছে। চলছে কেনাবেচাও। ৭-৮ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় প্রচুর খামার গড়ে ওঠেছে। কোরবানির পশুর চাহিদার বড় অংশের জোগান দেন খামারিরা। এছাড়াও গ্রামের পারিবারিক ও ছোট খামারিরাও বড় জোগান দেন। চট্টগ্রামে পার্শ্ববতী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও নেপাল থেকে আমদানি ও অন্য জেলা থেকে সরবরাহ করে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে হয়।
২০১৪ সালে ভারত গরু আমদানিতে কড়াকড়ি করার পর দেশীয় খামারি ও গরু উৎপাদনকারীরাও গরু পালনে মনোযোগী হয়েছেন। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তে কড়াকড়ি ও গরুর দাম বাড়তি থাকায় দেশীয় উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। এতে কোরবানিতে দেশীয় গরুর উৎপাদন কয়েক বছর ধরে বেড়েছে।
নগরীর ফাতেহা এগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ওমর কাইয়ুম পারভেজ বলেন, গো-খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে খামারিরা গরু লালন-পালনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। অনেক খামারি টিকতে না পেরে বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছর যে গরুর দাম ৮০-৯০ হাজার টাকা ছিল তা এখন ১২০ হাজারের বেশি দামে কিনতে হবে। তাই কোরবানিরা আগে-ভাগে খামার থেকে গরু কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কোরবানির আগে বাজার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেই গরু কেনেন।
খামারিরা জানান, কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশেও প্রচুর গরুর খামার গড়ে উঠেছে। লাভজনক হওয়ায় মানুষ এখন গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন। উত্তরবঙ্গ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা, জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, পশ্চিম পটিয়া, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনীয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গরুর খামার ও গরু পালন করা হয়। কয়েক বছর ধরে পশু খাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অনেক খামারি মার খেয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। গো-খাদ্যের দাম কমানো ও কম সুদে ব্যাংক ঋণের দাবি করে আসলেও সরকার নজর দেয়নি।
পূর্বকোণ/পিআর