নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর, মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কটূক্তি, সাবেক পৌর মেয়রকে হেনস্তাসহ বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় আসেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার পিস্তল হাতে নিয়ে মিছিল করে আলোচনায় আসেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিলে তাঁকে পিস্তল হাতে দেখা যায়।
গত সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়। অস্ত্র হাতে নিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। মিছিল কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর একটি ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে নেন। পরে পিস্তল হাতে নিয়ে মিছিল করেন তিনি। এ সময় মিছিলের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়।
সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে মিছিলে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘মহান জাতীয় সংসদ সদস্যরা দেশের তরুণ-যুবকদের কাছে অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণাদাতা। সেখানে একজন এমপি যা করেছেন তা নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক কাজ। দেশের ১৮ কোটি মানুষের কেউ করলে এতক্ষণে আইনের আওতায় আনা হতো। কিন্তু এমপির ক্ষেত্রে এখনো তা হয়নি। অথচ আইন সবার জন্য সমান। এ নিয়ে দেশের তরুণ ও কিশোর গ্যাংদের কাছে কী ম্যাসেজ গেল।’
সংসদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘আইন প্রণেতাদের সৃজিত আইন দেশের আদালতের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাস্তবায়ন করে। অস্ত্র হাতে নেওয়ার ঘটনায় দেশের সুশাসন ও গণতন্ত্র সুদূরপরাহত। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করায় আমরা হতবাক ও বিস্মিত। আশা করবো, ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটায় সেজন্য সরকার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে সরকার, এটা নাগরিকদের প্রত্যাশা।’
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ‘বিব্রত’ বলে জানান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আ. লীগ নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা ছাড়াও গ্রেনেড হামলা করে প্রধানমন্ত্রীকে নানাভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও মানুষের ভালবাসা ও দোয়ায় বেঁচে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অস্ত্রের বদলে অস্ত্র, হত্যার বদলে হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয় আ. লীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তা উৎসাহিত করেননি। পক্ষান্তরে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সকলের কাছে অনুরোধ, দলীয় শৃঙ্খলা, আদর্শ পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক যে নির্দেশনা দেবেন, জেলা আওয়ামী লীগ সেই নির্দেশনা মতে ব্যবস্থা নেবে।’
গতকাল (মঙ্গলবার) সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে তাঁর ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘প্রকাশ্য জনসভায় যদি বিএনপি নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর মতো বক্তব্য দিতে পারেন। তবে আমি বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে অগ্নিসন্ত্রাসকারী বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে মিছিলে অংশ নিলে তাতে ক্ষতি কি ?’
এ বিষয়ে বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কেউ হত্যা করবে, আমি তাকিয়ে থাকবো না। প্রতিরোধ করবো। আমাকে হত্যা করেই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে হবে।’
২০১৬ সালের ১ জুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল কবীরকে মারধর করার অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন নির্বাচন কমিশন। পছন্দমতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছিল। এ বিষয়ে এমপির বিরুদ্ধে মামলা ও বাঁশখালীর সব কটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করেছিল ইসি। এছাড়াও ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। সেসময় শেখ সেলিমুল হক সংবাদ সম্মেলনে করে বলেছিলেন, ‘ নিজস্ব বাহিনী ও জামায়াত-বিএনপির লোক দিয়ে সংগঠন চালাচ্ছেন বাঁশখালীর এমপি। আওয়ামী লীগের লোকজন তার সঙ্গে নেই’।
২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সরকার ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালে এমপির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে সমালোচনায় আসেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান।
পূর্বকোণ/এ