নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাত অবধি মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ মানুষ, প্রতিকার চেয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
আজ সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সুজন।
এসময় খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এসএসসি, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল পরীক্ষা অতি সন্নিকটে। তারপরও প্রতিদিন কতিপয় অবিবেচক মানুষ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিয়ে, গায়ে হলুদ কিংবা বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে যখন-তখন, যেখানে-সেখানে উচ্চ শব্দে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে শব্দদূষণ করছে। এসব মাত্রাতিরিক্ত ও অসহনীয় শব্দদূষণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও এর প্রতিকারের যেন কেউ নেই। শব্দদূষণে শিশু থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগী, বৃদ্ধ ও পরীক্ষার্থীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারন নাগরিকদের। এসব শব্দদূষণ জনগনের নিরুপদ্রব জীবন যাপনে মারাত্নক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা খুব বেশি সমস্যায় পড়ছেন।
সুজন বলেছেন, রাতের নিরিবিলি পরিবেশ পড়ালেখার জন্য উপযুক্ত হলেও শব্দদূষণের কারণে উল্টো শিক্ষার্থীদের পড়ার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত শব্দদূষণে উচ্চ রক্তচাপ, মাথাধরা, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই নাগরিক সাধারণ শব্দদূষণের যন্ত্রণায় এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড উভয়েরই বিধান থাকলেও শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীরা এসব আইনের কোন তোয়াক্কাই করছে না।
অন্যদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশও এই আইনটির প্রয়োগে অনেকটা উদাসীন। ফলত দিনের পর দিন এভাবে শব্দদূষণের ফলে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই অহেতুক মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের নামে এসব শব্দদূষণ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নিকট আহবান জানান সুজন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টসহ কঠোর নজরদারির মাধ্যমে শব্দসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, দেখা যাচ্ছে যে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কিছু কিছু এলাকা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদকসেবীদের দখলে চলে যাচ্ছে। উঠতি বয়সের তরুণ থেকে শুরু করে বয়স্করাও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সন্ধ্যা নামতেই প্রকাশ্যে এসব মাদকের বিকিকিনি শুরু হয়। গাঁজা-ইয়াবা ফেনসিডিলের পাশাপাশি নতুন নতুন মাদকও পাওয়া যাচ্ছে এসব এলাকায়। ফলত যুব সমাজ এসব মাদকের উপর আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার প্রভাবে সমাজে নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডও সংগঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নির্যাতন ও খুন খারাপির মতো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি যুব সমাজ।
বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লার মোড়ে মোড়ে উঠতি তরুণ থেকে শুরু করে যুব সমাজ মোবাইলে নিষিদ্ধ গেম এবং জুয়ার প্রতি অনেকটা ঝুঁকে পড়ছে। বাজার, মহল্লা, চায়ের দোকান ও খোলা মাঠে অনেকটা প্রকাশ্যে এসব জুয়ার আসর বসছে। এ নিয়ে চলছে সামাজিক ও পারিবারিক অশান্তি। অনেকেই না বুঝে এসব জুয়ার খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। অনেক যুবক দৈনন্দিন আয়ের একটি বড় অংশ এসব গেমের আড়ালে জুয়া খেলে হারিয়ে ফেলছেন।
এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। বিশেষ করে আইপিএল ক্রিকেট খেলা ও অ্যাপসভিত্তিক গেম খেলা নিয়ে সর্বসান্ত হয়ে পড়ছে ছাত্র, তরুণ ও যুব সমাজ। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে কঠোর হস্তে এসব অপরাধ দমন করতে হবে বলে অভিমত সুজনের। এসব সামাজিক অপরাধ বন্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মোবাইল পেট্রোল, ফুট পেট্রোলসহ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার জন্য সিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খোরশেদ আলম সুজন।
পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ