চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

ইফতারের গুরুত্ব ও বরকত

রায়হান আজাদ

২০ মার্চ, ২০২৪ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ইফতার আরবি শব্দ, এর অর্থ নাস্তা। পরিভাষায় ইফতার হচ্ছে- সূর্যাস্তের সাথে সাথে রোজা পালনকারী কোন কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে দেয়া। ইফতার গ্রহণ সুন্নত। শারীরিক স্থিতিশীলতা, গতিশীলতা ও অপরিসীম বরকত হাসিলের জন্য ইফতার করা প্রয়োজন। ইফতার রকমারি নাস্তার পসরা নয়, যেকোন কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলা মাত্র। ইফতারের মধ্যে প্রচুর সওয়াব, কল্যাণ, আনন্দ ও তৃপ্তি রয়েছে। পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। অজু করে পাক সাফ হয়ে ইফতার করতে যাওয়া উত্তম। ইফতার গ্রহণের পূর্বে পড়ার একটি প্রসিদ্ধ দোয়া রয়েছে। এ দোয়া পড়ে ইফতার শুরু করলে অনেক সওয়াব হয়। দোয়াটি হলো- ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।’

ইফতারির সময়টি রোজাদারের জন্য দারুণ আনন্দের। এ সময় চাপা খুশিতে সবার মন ভরে ওঠে। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমায়েছেন, ‘রোজাদারের আনন্দের সময় দুটো। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়।’

 

আমাদের সামাজিক জীবনে ইফতারের খুশি সবার মনে এক অন্যরকম প্রাপ্তির ঢেউ খেলে যায়। ইফতারের সময় এলে বাসায় ছেলেমেয়েরা আনন্দে মেতে ওঠে, দোকানপাটে ভিড় ও রাস্তায় জ্যাম হালকা হয়ে পড়ে, একইসময়ে এবং একইসাথে খাওয়ার জন্য ডাক পড়ে। অনুপম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের নমুনা সৃষ্টি হয় ধনী-দরিদ্র, মালিক-শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত সময়ে ইফতার গ্রহণের মধ্য দিয়ে।

 

ইফতারের সময় দোয়া করার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির লোকের দোয়া ব্যর্থ যায় না। তারা হলেন- ১) ইফতারের প্রাক্কালে রোজাদারের দোয়া, ২) ন্যায়পরায়ণ নরপতির করজোড়ে মিনতি ও ৩) মজলুমের বুকফাটা ফরিয়াদ।

 

খেজুর দিয়ে ইফতার করা উত্তম। এতে অশেষ বরকত ও ফজিলত রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসে রয়েছে, ‘হজরত আনাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পূর্বে গুটিকয়েক ‘রুতব’ অর্থাৎ আধাপাকা বা সদ্যপাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ‘রুতব’ না পেলে পূর্ণ পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন, তাহলে কয়েক কুলি পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিজি)

 

ইফতার গ্রহণে পরিমিতিবোধ বজায় রাখা উচিত। পেট পুরে ভাজা-পোড়া খাওয়া ঠিক নয়। ইফতারের ক্ষেত্রে ইসলামে যেসব খাবার গ্রহণ ও বর্জন করার উপদেশ দেয়া হয়েছে সেটা আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। অতিরিক্ত ভোজন ইসলামি পদ্ধতি নয়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘নিশ্চয় প্রকৃত মুমিন স্বল্পভোজী, পরিমাণমতো খায়। আর কাফির নাক ডুবিয়ে খায়।’ এখানে অতিভোজন পরিহারের জন্য উপদেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের পেয়ারা নবী ও সাহাবিগণ সবসময় স্বল্পভোজী ছিলেন।

 

উপমহাদেশের খ্যাতিমান মুফাসসির হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইফতারকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। (১) ইফতারে আসগর- যা রোজাদার প্রতিদিন গ্রহণ করে থাকে। (২) ইফতারে আকবর- যা পবিত্র ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত। এ দিন রোজাদারদের খাওয়ার দিন, খুশির দিন।
ইফতার গ্রহণ করা শারীরিকভাবে যেমন প্রয়োজন, তেমনি শরিয়তে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে এবং দেরিতে সেহরি খাবে।’-(আহমদ)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার কাছে সর্বাপেক্ষা বড় বান্দা তারাই, যারা যথাসময়ে ইফতার করে।’ (তিরমিজি)

 

বুখারি শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করলে মুসলমানরা সাফল্য ও উন্নতি লাভ করবে। অন্যান্য কিতাবধারীরা বিলম্বে ইফতার করে।’ আল্লাহ পাক আমাদেরকে সুন্নতি তরিকায় ইফতার গ্রহণের তৌফিক দান করুন, আমিন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট