চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪

সাদাকাতুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ফখরুল ইসলাম নোমানী

২০ এপ্রিল, ২০২৩ | ৯:১৫ অপরাহ্ণ

রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং এ আনন্দে যেন মুসলিম জাতির প্রতিটি সদস্য শরিক হতে পারে এ জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে সদাকাতুল ফিতর।

আসছে ঈদুল ফিতর। আর ঈদুল ফিতরের দিনের অন্যতম আমল হলো সদকাতুল ফিতর। ইসলামে সদকাতুল ফিতরের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি যাকাতেরই একটি ধরন। রাসুল (সা.) হাদিস ও সুন্নাহ তা আদায়ের তাগিদ করেছেন এবং এর নিয়ম-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এ কারণেই রাসূলের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ ইসলামের পাঁচ রোকন ও দ্বীনের অন্যান্য মৌলিক আমল ও ইবাদতের মতো সদাকাতুল ফিতরও নিয়মিত আদায় করে আসছে। আমাদের এ অঞ্চলে তা ফিতরা নামে পরিচিত।

সদাকাতুল ফিতর যাকাতের মতোই একটি আর্থিক ইবাদত। তবে সম্পদের সদাকাকে যাকাত বলা হয়। আর দেহের যাকাতকে সদাকাতুল ফিতর বা সদকায়ে ফিতর বলা হয়। সদাকাহ শব্দটি আরবি শব্দ। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় এটি দ্বারা ফরজ যাকাতকে বুঝায়, আবার নফল দানের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। ফিতর শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে রোজা খোলা। আর সদাকাতুল ফিতরের অর্থ হচ্ছে- রোজা ভাঙা বা রোজা খোলার সাদাকাহ। সাদাকাতুল ফিতর বলতে ঐ আর্থিক ইবাদতকে বুঝায়, যা পবিত্র রমজানের রোজা সমাপ্ত হওয়ার এবং রোজা খোলার পর দেয়া হয়। যাকাত যেমন মালকে পবিত্র বৃদ্ধি ও পরিশুদ্ধ করে তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে। একই সাথে ঈদুল ফিতরের দিন গরিব-মিসকিনদের মুখে ঈদের হাসি ফোটানোর উদ্দেশ্যে সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব।

সদাকাতুল ফিতর এমন প্রত্যেক স্বচ্ছল মুসলমান নারী-পুরুষ নাবালেগ-সাবালেগের ওপর ওয়াজিব, যার নিকট তার প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত এতো মূল্যের মাল হবে, যার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। সে মালের ওপর যাকাত ওয়াজিব হোক অথবা না হোক। সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় ঈদের দিনে প্রত্যুষে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে মারা যাবে অথবা ধন-সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে তার ওপর ওয়াজিব হবে না। আবার যে শিশু ফজরের পর জন্মগ্রহণ করবে তার ওপরও ওয়াজিব হবে না। তবে যে শিশু ঈদের রাতে জন্মগ্রহণ করবে তার ওপর ওয়াজিব হবে।

আবার যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং ধনের মালিক হবে তার ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। হাদিসে বর্ণিত আছে সাহাবায়ে কিরামগণ (রা.) ঈদের দু’এক দিন আগেই সাদাকাতুল ফিতর বিতরণ করতেন। দু’চার দিন আগে আদায় করতে অপারগ হলে ঈদের নামাজের আগে অবশ্যই পরিশোধ করা উচিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সদাকাতুল ফিতর নামজের আগেই দিয়ে দেবে তাহলে সেটা হবে আল্লাহর নিকট গৃহীত সদাকাহ। আর যে নামাজের পরে দেবে তার সদাকাহ হবে দান খয়রাতের মতো একটি সাধারণ সদাকাহ-(সহিহ আল বুখারি)।

যাদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব:

১) প্রত্যেক স্বচ্ছল ব্যক্তি তার নিজের ছাড়াও নাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে।

২) জ্ঞান ও হুশহারা সন্তানের পক্ষ থেকে, তার মাল থাক অথবা না থাক, তাদের পক্ষে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

৩) বাড়ির চাকর-বাকর বা তারা যাদের ভরণ-পোষণ করেন তাদের পক্ষ থেকে মালিককে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।

৪) সাবালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে পিতার সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, যদি দুস্থ ও দরিদ্র হয়।

৫) স্ত্রীর পক্ষে তার স্বামী সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবেন।

৬) পিতা মারা গেলে এবং দাদা জীবিত থাকলে দাদার ওপর সকল দায়িত্ব বর্তাবে যে দায়িত্ব পিতার ওপর ছিল।

৭) স্ত্রী যদি স্বচ্ছল হয়ে থাকেন তাহলে শুধু তার সাদাকাতুল ফিতর নিজেই আদায় করা যাবে। জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটি এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে মুসলমান নারী-পুরুষের সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়। যাকাত পাবার হকদারগণ সাদাকাতুল ফিতর পাবার হকদার। অর্থাৎ যে সব খাতে যাকাত দেয়া যায় সে সব খাতে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হব। একটি ফিতরা একজন ব্যক্তিকে দেয়া যায় আবার কয়েকজন লোককে ভাগ করেও দেয়া যায়। তাছাড়া কয়েকটি ফিতরা একজন ব্যক্তিকে দেয়ারও বিধান আছে। সাদাকায়ে ফিতর আদায় না করা কোনো মতেই শরীয়তসম্মত নয়।

তাই নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। সমাজর মুসলমানদের মাঝে সাদাকাতুল ফিতর বিতরণে উৎসাহ প্রদান ও অনুশীলন করতে হবে। তবেই মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব সহজ হবে।

লেখক: ফখরুল ইসলাম নোমানী, ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

পূর্বকোণ/সাফা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট