চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হোম কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা বাড়ছে ঝুঁকিতে প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ মার্চ, ২০২০ | ১০:৪৩ অপরাহ্ণ

বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। জনসুরক্ষায় এটি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে বল প্রয়োগও করা হচ্ছে। এর পরও সরকারের পরামর্শ উপেক্ষা করে হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন বিদেশফেরত ব্যক্তি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কভিড-১৯-এ সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বলছে, প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত না করা গেলে দেশের প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় রোগটির বড় মাত্রায় প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি তৈরি হবে।

সরকারি হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত দেশে মোট কোয়ারেন্টিনকৃত ব্যক্তির সংখ্যা ৯ হাজার ১০৬ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থেকেছেন ৭৭ জন। হাতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হোম কোয়ারেন্টিন হয়েছে সিলেটে, ৫৬৫ জন। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বিদেশফেরত ১ হাজার ৭০০ জনকে খুঁজছে পুলিশ।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, দেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ বিশ্বের ১৬৫টি দেশে কর্মরত। এসব দেশের অধিকাংশেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিএমইটির এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিদেশে এক লাখেরও বেশি বাসিন্দা কাজ করছেন, এমন জেলার সংখ্যা ২৮টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলার। এ জেলার মোট ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৩ জন মানুষ দেশের বাইরে থাকেন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি প্রবাসী রয়েছেন এমন শীর্ষ ১০ জেলার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও ফেনী।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক বন্দর ব্যবহার করে গত ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে প্রবেশ করেছেন মোট ৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৩৮ জন। সর্বশেষ গতকাল সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ৪০৬ জন বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজনের তাপমাত্রা বেশি থাকায় সরাসরি হাসপাতালে নেয়া হয়। বাকিদের হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশনা দিয়ে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে ছিলেন ৯ হাজার ১০৬ জন। গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৭১৩ জনকে। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ জনকে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৫ জন। ১০ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত আইসোলেশনে থেকেছেন মোট ৭৭ জন। এর মধ্যে ৩৫ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। গতকাল আইসোলেশনে গিয়েছেন মোট ১৯ জন।

গতকাল সচিবালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের যৌথ নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সচিবদের নিয়ে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে সব জেলার প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের তথ্য ও চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে কেন্দ্রে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২০ জেলায় মোট ৩ হাজার ৯৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৫৬৫ জন। তাদের মধ্যে গতকাল নতুন করে যোগ হয়েছেন ১৫৫ জন।

মানিকগঞ্জ জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪২৯ জন। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টিন পূর্ণ করে অবমুক্ত হয়েছেন ৭৮ জন। জেলাটিতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের নির্দেশনাবলি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

নওগাঁ জেলায় গতকাল পর্যন্ত বিদেশফেরত এসেছেন ৪১ জন। এ জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৩৪ জন। আর ছয়জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। গাজীপুর জেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫০, আর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৩ জন। এ জেলায় মোট কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৯৩ জন। রাজবাড়ী জেলায় কোয়ারেন্টিনে আছেন ৮৭ জন। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ৩০ জন। কেউ আইসোলেশন ইউনিটে নেই। ফরিদপুর জেলায় গতকাল হোম কোয়ারেন্টিনে গিয়েছেন ২৩ জন। এতে জেলায় মোট হোম কোয়ারেন্টিনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ জনে। তিনজন হোম কোয়ারেন্টিন সম্পন্ন করেছেন।

এদিকে সরকারের দেয়া হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় বিভিন্ন জেলায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় সুরুজ আলী নামে একজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। নওগাঁর পত্নীতলায় তিনজকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদরে একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে দুজন প্রবাসীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিন না মানায়। লালমনিরহাটের সদর উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় বিদেশফেরত প্রবাসীকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর ও কুলাউড়া উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টিনের বিধি ভঙ্গ করায় চার ব্যক্তির ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

নতুন করে বগুড়া জেলার আরো ১২৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে গত নয়দিনে জেলায় ২২৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বগুড়া সিভিল সার্জন গওসুল আজিম চৌধুরী জানান, বগুড়ায় গতকাল নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে ১২৫ জনকে রাখা হয়েছে। এছাড়া যারা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

পিরোজপুর সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকী জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গতকাল আরো ৩২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তারা সবাই বিদেশফেরত। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, গতকাল নতুন করে আরো ৩৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে খুলনায় ৬৬ জন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। কুড়িগ্রামে সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় ৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। যদিও গত এক মাসে জেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৪০ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। তাদের তালিকা হাতে পেয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

নেত্রকোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিদেশফেরত ৩৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। নেত্রকোনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. তাজুল ইসলাম খান জানান, নেত্রকোনা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিদেশফেরত রোগীদের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নাটোর জেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আরো নয় প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে নাটোরে ২৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলায় নতুন করে আরো পাঁচজন বিদেশফেরতকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলায় মোট সাতজন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খান (অংকুর) বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে আট শয্যাবিশিষ্ট করোনা আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ইউনিটের জন্য একটি চিকিৎসক দলও প্রস্তুত রয়েছে। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা

 

 

পূর্বকোণ-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট