চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্ষণজন্মা প্রতিভাবান জহির রায়হানের জন্মদিন আজ

অনলাইন ডেস্ক

১৯ আগস্ট, ২০২০ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা প্রতিভাবান মানুষ জহির রায়হানের জন্মদিন আজ। তিনি একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। ব্যক্তি জীবনে জহির রায়হানের ছিল দুই স্ত্রী- অভিনেত্রী সুমিতা দেবী ও সুচন্দা। সুমিতার ঘরে দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই নাট্য নির্মাতা। স্ত্রী সুচন্দার ঘরে আরেক ছেলে তপু রায়হান অভিনেতা।

১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। সাংবাদিক জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে যুগের আলো পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে। পরবর্তীতে খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতে কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন জহির।

চলচ্চিত্র জগতে জহির রায়হানের পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে। এ জে কারদারের বিখ্যাত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ‘যে নদী মরুপথে’তেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’-এ জহির রায়হান নামসঙ্গীত রচনা করেন।

১৯৬১ সালে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘কখনো আসেনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন উর্দু ভাষায় এবং পরের বছর প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’ মুক্তি পায়।

জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও অংশ নেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জহির রায়হান কলকাতায় চলে যান, সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। পাকিস্তানি আক্রমণের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন ‘স্টপ জেনোসাইড’ প্রামাণ্যচিত্রে। যা বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে।

তার রচিত প্রথম উপন্যাস ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। অন্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো হাজার বছর ধরে ও আরেক ফাল্গুন।
কলকাতায় ‘জীবন থেকে নেয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রদর্শনী হতে পাওয়া টাকা মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করেন জহির রায়হান।

স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে নিখোঁজ ভাই কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের অনুসন্ধান শুরু করেন জহির রায়হান। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ভাইয়ের খোঁজে মিরপুর গিয়ে আর ফিরে আসেনি তিনি।

১৯৬৪ সালে ‘কাঁচের দেয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি নিগার পুরস্কার লাভ করেন। ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটির জন্য ১৯৬৪ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন । মরণোত্তর বেশ কিছু স্বীকৃতি লাভ করেন তিনি। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ সম্মাননা পান।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট