চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অব্যাহত থাকুক পাঠকপ্রিয় দৈনিক পূর্বকোণের জয়যাত্রা

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক সংবাদপত্রের অনন্য দৃষ্টান্ত দৈনিক পূর্বকোণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যারা প্রকাশক ও মুদ্রণশিল্পের সাথে কাজ করেছেন তাঁদের সাথেই যোগাযোগ ছিল মরহুম ইউসুফ চৌধুরীর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পত্র-পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন তিনি এবং তাঁর নিউজ ফ্রন্ট। এই নিউজ ফ্রন্টে আসতেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, লেখক, কবি, সাহিত্যিকরা। ফলে প্রিন্টিং মিডিয়ার ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান ও জানাশোনার প্রসারতা বাড়ে। একটা পর্যায়ে তিনি এক ঝাঁক তরুণ-প্রবীণ মেধাবীকে নিয়ে প্রকাশ করেন দৈনিক পূর্বকোণ। শুরু থেকেই পূর্বকোণ চট্টগ্রামের মানুষের স্বপ্ন এবং আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে পথ চলতে থাকে। একটা পর্যায়ে পরিণত হয় এ অঞ্চলের মানুষের কণ্ঠস্বরে।

ফলে সব মানুষের কাছে পত্রিকাটির গ্রহণযোগ্য হিমালয় সমান হয়ে যায়। পাঠকপ্রিয় দৈনিক হিসেবে সারাদেশে সমাদৃত হতে থাকে। পরিণত হয় দেশের সেরা আঞ্চলিক দৈনিকে। এই পত্রিকার স্বপ্নদ্রষ্টা চট্টলদরদী ইউসুফ চৌধুরীর উঠাবসা ছিল সমাজের বরেণ্য গুণী শিল্পী, সাহিত্যিকদের সাথে। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারদেরও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি তাঁর অবর্তমানে হাল ধরার জন্যে প্রস্তুত করে তুলেন। ফলশ্রুতিতে তাঁর অবর্তমানেও পূর্বকোণের জয়যাত্রা দাপটের সাথেই অব্যাহত আছে।

সকল মানুষের ভেতরেই আরেকটি মানুষ থাকে। যা আমরা সাধারণ চোখে দেখতে পাই না। সে অন্তরের আলো দিয়ে পৃথিবীকে, প্রকৃতি এবং মানুষকে দেখতে পান। তাদের আবিষ্কারের মধ্যে যান্ত্রিকতা থাকে না। থাকে বিস্ময়ের উপাদান, মানুষের কল্যাণের চিন্তা- এ ধরনের অনন্য এক গুণী হচ্ছেন চট্টলদরদী মরহুম ইউসুফ চৌধুরী। আর তাঁর অনন্য সৃষ্টি হচ্ছে দৈনিক পূর্বকোণ।
১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক পূর্বকোণ এক ঝাঁক মেধাবী লেখক, সাংবাদিক ও কলম সৈনিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রচলিত ধারার বিপরীতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ পত্রিকার যাত্রারম্ভ হয়। চরম প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণে সক্ষম হয়। আর শুরুতেই এ পত্রিকার স্বপ্নদ্রষ্টা ইউসুফ চৌধুরী এমন একজনকে এ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন, যিনি একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সুদক্ষ সুঅভিজ্ঞ সাংবাদিক, রাষ্ট্রদূত পর্যায়েও যিনি সুনিপুণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি হচ্ছেন কে জি মুস্তফা। শুভ্রবসনা, ঝাঁকড়া চুল, বিদ্রোহী কবি নজরুল এর মত কোকরানু সাদা চুল। অসাধারণ এক মানুষ ছিলেন তিনি। স্বল্প সময়েই তিনি পূর্বকোণের সম্মানজনক অবস্থান গড়ে তোলেন। পূর্বকোণের অফিসও ছিলো শুরু থেকেই নান্দনিক। সিগনেট প্রেসের অঙ্গনে পূর্বকোণ এর অগ্রযাত্রার নান্দনিক অফিস যেন ভাবগম্ভীর এক সংবাদপত্রের আধুনিক অফিস।

চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র বিপনী বিতানের উত্তর পাশেই এই অফিস শুরুতেই প্রচার বিপণন। ছাপানো গেটআপ, সাধারণ মানুষের, কবিপ্রেমী মানুষের, কলম সৈনিকের তুলির স্পর্শে জাতির আলোকিত পথনির্দেশক ও সভ্যসমাজের দৈনন্দিন অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত করেছে। দৈনিক পূর্বকোণ সমাজ পরিবর্তনে, অবহেলিত চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান ও সমাজের অসঙ্গতি দূর করতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে শুরু থেকেই। সমৃদ্ধ ও আধুনিক চট্টগ্রাম গড়ার অঙ্গীকারে চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী পূর্বকোণ এর অগ্রযাত্রা শুরু করেন। উনার শীতল স্পর্শে পূর্বকোণ আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও জাতীয় পত্রিকার আদলে স্বীকৃতি পেয়ে প্রচার ও প্রসারতা লাভ করে শীর্ষে অবস্থান করছে। এই ধারাবাহিকতা এখনও সমানে চলমান রয়েছে। উনার মৃত্যুর পর পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০০৭ সালে স্থপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী। উনার আমলে পত্রিকার গঠন শৈলী আরও দ্বিগুণ মাত্রা পায়। একজন স্থপতি হিসাবে পূর্বকোণ অফিসকেও তিনি নান্দনিক ভিন্নমাত্রায় সাজিয়ে তোলেন।

তিনিও ছিলেন এক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি সমাজে অসামান্য অবদান রেখে পরপারে চলে গেলে পূর্বকোণের হাল ধরেন তাঁরই ছোট ভাই প্রকাশক ও পরিচালনা সম্পাদক জসি মউদ্দিন চৌধুরী এবং ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী। একজন সুদক্ষ সম্পাদক হিসাবে ডা. ম রমিজউদ্দিন চৌধুরীর নাম ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে।
জন্মলগ্ন থেকেই দৈনিক পূর্বকোণ দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষায় আপোষহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। জনস্বার্থলগ্ন নৈর্ব্যাক্তি ও সাহসী সম্পাদকীয় এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কারণে পূর্বকোণ’র জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। আমাদের বিশ^াস আগামিতেও পূর্বকোণের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট