আজ পবিত্র ঐতিহাসিক আশুরা। ইসলামে ঘটনাবহুল এবং বরকত ও ফজিলতময় যে কয়টি দিবস রয়েছে তন্মধ্যে আশুরা অন্যতম। আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশরুন’ থেকে এসেছে। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। ইসলামের ইতিহাসে নানাভাবে অবিস্মরণীয় ও মহিমান্বিত এ দিবস সবদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলমানদের মতো পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্মানুসারীদের কাছেও এ দিবসের গুরুত্ব স্বীকৃত।
আরবি মহররম শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ, পবিত্র। এ মাসে কোনো প্রকার ঝগড়া-বিবাদ বা যুদ্ধবিগ্রহ শরিয়তে নাজায়েজ বা নিষিদ্ধ। যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ হতে মাসটি পবিত্র বলে একে মাহে মহররম তথা পবিত্র মাস বলা হয়। রাসুলে আকরাম (সা.) এ মাসে কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধযাত্রায় বের হননি। ইসলাম-পূর্ব যুগেও এ মাসে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করত। মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ- এ চারটি মাসকে আল্লাহ তাআলা পরম সম্মানিত ও পবিত্র বলে আল কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরতের পর মদিনায় এসে দেখতে পেলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তারা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে এ দিন পালন করছে। মহানবী (সা.) জানতে পারলেন, তারা হযরত মুসার (আ.) প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য এ দিনকে বেছে নিয়েছে। হুজুর পাক (সা.) উপলব্ধি করলেন, হযরত মুসা (আ.) এর সাথে আমাদেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই তিনি ঐ দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে উপদেশ করলেন। তবে ১০ মহররমের আগে পরে আরেকটি রোজা বাড়িয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন।
২য় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজার পর আশুরার রোজার মর্যাদা এখনও সর্বাধিক।
আশুরার রোজাকে ইহুদিদের রোজা হতে পৃথক করার জন্য নবীজী বলেছেন “তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং ইহুদিদের থেকে ব্যতিক্রম কর। আশুরার একদিন পূর্বে ও একদিন পরেও রোজা রাখ”।
১০ মহররম ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) সিরিয়ার কুখ্যাত বাদশাহ ইয়াজিদের অসভ্য সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে শাহাদাত বরণ করলে শোকাবহ এ দিনটি ঐতিহাসিক কারবালা দিবস হিসেবেও ধর্মীয় গাম্ভীর্য সহকারে মুসলিম বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। আসুন শোহাদায়ে কারবালার মহান আদর্শকে ধারণ করে যাবতীয় সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মিথ্যাকে রুখে দাঁড়াই।
পূর্বকোণ/এসএ