চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজে চাঁদা দাবিতে হামলা, ভাঙচুর ও কয়েকটি লরি ও এক্সকেভেটর জ্বালিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ লুট ও নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করেছে তারা। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে মাতারবাড়ি-ধলঘাটা বন্দরের মুহুরী ঘোনার পশ্চিমে সাগর তীরবর্তী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মহড়া বসিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
মহেশখালী থানার ওসি কায়সার হামিদ রাত ৭টার সময় জানান, পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সন্ত্রাসী সহোযোগীরা জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।
জানা গেছে, জাহানারা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাকিল এন্টারপ্রাইজের একটি স্কেভেটর ও একটি ড্রেজার পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া, শ্রমিকদের মারধর করে মোবাইল, নগদ অর্থ, ৪ হাজার জিউ-ব্যাগ ও একটি জেনারেটর লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া, একই প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত বন্দরের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাজএন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী আব্বাস উদ্দিন জানান, টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পেয়ে গত বছর থেকেই কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের পাশে জমির মানোন্নয়নে কাজ করছিলেন তারা। দুর্গম এলাকা হওয়ায় স্থানীয় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সাম্প্রতি আরো বেশ কয়েকজন বিভিন্ন পরিচয়ে ফোন করে তাদের কাছে কাজের ভাগ চায়। একপর্যায়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত তিন টার দিকে ৪০ /৫০ জনের সশস্ত্র একটি দল এসে নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করে ৫টি লড়ি ও একটি এক্সেভেটর জ্বালীয়ে দেয়। এসময় ১৪ হাজার জিও ব্যাগসহ ছোট খাটো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায় দুবৃত্ত্বরা। সব মিলিয়ে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ২ কোটি টাকার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শাকিল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাকিল এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার পরপরই বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নৌবাহিনী সদস্যরা ও মহেশখালী থানার মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের একটি টিম। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ধরনের সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ধলঘাটার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ ধরনের হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তারা দেশের উন্নয়ন ও শান্তি বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, দ্রুত এসব সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।” মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের পিডি সাইফুল ইসলাম জানান, হামলার বিষয়টি তারা জেনেছেন। করণীয় ঠিক করতে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টিম মাতারবাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পূর্বকোণ/হোবাইব/রাজীব/পারভেজ