নগরায়নের যুগে গ্রামের আধুনিকায়ন হলেও হারিয়ে যাচ্ছে বহু গ্রামীণ ঐতিহ্য। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে একেক ঋতুতে একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বর্তমানে প্রকৃতিতে শীত বিরাজমান। শীতকাল বললে প্রথমেই আসে গ্রামীণ মহিলাদের বানানো ভাপা পিঠার কথা।
শীতকালে খেজুরের রসে ভাপা পিঠা খাওয়ার ধুম পড়তো গ্রাম কিংবা শহরে। তবে ভাপা পিঠা থাকলেও এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই গ্রামে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন বসতবাড়িও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।
গ্রামের লোকজন এখন আর আগের মতো খেজুর রস পান না বললেই চলে। তবে যেটুকু রস পাওয়া যায় তাও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। চড়া দামে কিনে খেতে হচ্ছে এক সময়কার সহজলভ্য খেজুরের রস। এই দুষ্প্রাপ্যতার সময়েও বোয়ালখালীসহ চট্টগ্রাম শহর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বহু মানুষের রসের চাহিদা মেটাচ্ছে বোয়ালখালীর ঐতিহ্যবাহী মৌসুমী বহুমুখী কৃষি খামার।
সরেজমিনে খামার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৩০০ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এই খামারটি বোয়ালখালীর আরাকান রোডের আপেল আহমদের টেক ও পেতন আউলিয়ার দরবার শরীফের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। এই খামারের দুটি বিশাল পুকুরের চারদিকে লাগানো হয়েছে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছগুলো থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে খেজুরের খাঁটি রস।
খামারের ম্যানেজার মো. শফিকুর রহমান জানান, বর্তমানে খামারে ১৫০টি খেজুর গাছ আছে। এর মধ্যে ১১৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতি লিটার রসের দাম পড়ে ১২০ টাকা। এক কলসিতে ৫ লিটার করে রস পাওয়া যায়। এক কলসি রসের দাম ৬০০ টাকা।
তিনি বলেন, খামারের মালিক আবদুর রশীদ এই খামারে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। শীতকালে রসের চাহিদা বেশি থাকার দরুন কেউ হঠাৎ করে চাইলে রস নিতে পারেন না। কারও রসের প্রয়োজন পড়লে কমপক্ষে ৩-৪ দিন আগে খামারে এসে অর্ডার করে যেতে হয়।
২০০৩ সাল থেকেই খামারে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন নওগাঁর হাটুরিয়া গ্রামের মইন উদ্দিন মোল্লা। তিনি জানান, বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রসের চাহিদা বেশি। এই খামারে বোয়ালখালীসহ দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসেন ফ্রেশ রসের জন্য।
পূর্বকোণ/মাহমুদ