চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২:২৬ অপরাহ্ণ

মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে দুই পাড়েই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। এখনো রাখাইন রাজ্যে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ চলছে। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে। এমন আশঙ্কায় বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দীর্ঘ ১১ মাসের লড়াই-সংঘাতের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।

 

গত রবিবার দুপুরে মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সর্বশেষ ৫নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় তারা। মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। নাফ নদীটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ভাগ করে রেখেছে। রাখাইন রাজ্যের বিপরীতে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ-উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটারে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।

 

জানা যায়, আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সেখানে গোলাগুলি বন্ধ আছে। মর্টার শেল, গ্রেনেড বিস্ফোরণও থেমে গেছে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলেও দুই পাড়ের (টেকনাফ ও মংডু) সীমান্তজুড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতদিন ওপারের বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপেছিল টেকনাফ সীমান্তের ২৩টির বেশি গ্রাম। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের কাউকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

 

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও রোহিঙ্গা-সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির সভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন। তিনি উখিয়ার কয়েকটি আশ্রয়শিবির (ক্যাম্প-৮, ১০, ১৭, ১৮) পরিদর্শন করেন। এ সময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে কক্সবাজার ফিরে এসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সমন্বয় কমিটির সভায় যোগ দেন বিভাগীয় কমিশনার।

 

রোহিঙ্গাদের সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যানিটি’র সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মংডু টাউন রাখাইন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় দুই পাড়ের (বাংলাদেশ-মিয়ানমার) রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। রাজ্যটি শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থেকে গেলে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন থেমে যাবে। অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যের বসবাসকারী আরও পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হতে পারে। কারণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ রয়েছে।

 

ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজ ইসলাম বলেন, জাহাজে পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য একাধিক পুলিশ সদস্য রাখা হচ্ছে। সেন্টমার্টিনদ্বীপ ভ্রমণের সময়ও সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এখনো তেমন ঝুঁকি তৈরি হয়নি।

 

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি মংডু দখল করার পর নাফ নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে প্রচারণা চালিয়েছে। নদীতে নামলে তারা গুলি চালাতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর আগেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যাত্রী পারাপারের একাধিক নৌযানে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল।

 

উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, মংডুর পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রতি নজর রাখছে আরাকান আর্মি। উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ওপারের (মংডু) রোহিঙ্গাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ আছে।

 

টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনার ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৬ ডিসেম্বর মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে মাছভর্তি একটি কার্গো ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিতে ভিড়েছিল। এরপর আর কোনো পণ্যবোঝাই ট্রলার আসেনি।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সীমান্তবর্তী জল ও স্থলপথে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

 

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ। কাউকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট