সাতকানিয়া উপজেলা ডাকবিভাগের মুছে গেছে সাইনবোর্ড। অকেজো নিরাপত্তা বেষ্টনী, চারদিকে ঝোপঝাড়, ডাকবিভাগের নেই কারো মাথাব্যথা, অপরিচিত কারো চেনার উপায় নেই- এটি কোন ডাকঘর। নিত্য যাদের কাজকারবার কিংবা স্থানীয় লোকজনই শুধু বলতে পারবেন এটি সরকারি ডাকঘর।
সাতকানিয়া উপজেলার প্রধান ডাকঘরের এমন অবস্থা বছরের পর বছর ধরে। উপজেলা ও পৌরসদরের বুকজুড়ে প্রধান সড়কের পাশে দ্বিমুখি ৩৬ শতক ভূমিতে ‘বাণিজ্যিক ভবনের’ স্বপ্ন ঘোরে সবার। ছলেবলে কৌশলে ডাকবিভাগের জায়গাটি বাগাতে মরিয়া প্রভাবশালী সবকটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের ‘ফাঁদে’ ফেলতে সক্রিয় প্রভাবশালী একটি চক্র। সম্প্রতি ডাকঘর বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা পরিদর্শনে এলেও পোস্টমাস্টারের কক্ষে বসে চা খেয়ে তড়িঘড়ি করে চলে যান। গত বছর বিশ্ব ডাক দিবসের দিনে ‘ঝোপঝাড়ে ডাক বিভাগের অর্ধশত কোটি টাকার সম্পত্তি, বেহাতের শঙ্কা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাবেক ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেলের চাপেচুপে অকেজো নিরাপত্তা দেয়ালের চারপাশে মাপঝোপ করলেও এখন পর্যন্ত ইট-সিমেন্টের গাঁথুনির কোন খবর নেই।
ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের খুব একটা না থাকলেও মানি অর্ডার, সঞ্চয় স্কিম, সরকারি চিঠিপত্র, পার্সেলের জমজমাট ডাকঘর। প্রতি কার্যদিবসেই এসবের জন্য গ্রাহকের ভিড় লেগেই থাকে। এছাড়া ১৬টি উপ-ডাকঘরের কার্যক্রমও এটিকে ঘিরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডাক ভবনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পোস্টমাস্টার থেকে শুরু করে ডেপুটি পোস্টমাস্টার পর্যন্ত কারো এসব নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। ডাক বিভাগ বলছে, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
গতকাল মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) গেট দিয়ে প্রবেশ করে দেখা গেল মুছে যাওয়া সাইনবোর্ড। দরজার দুপাশে সারি সারি রাখা মোটরসাইকেল। প্রায় ১৫/১৬ বছর আগে নির্মিত ডাকবিভাগের নতুন ভবনের উপর জন্মেছে গাছ। কয়েক ফুট পাশে থাকা পুরনো ভবনের চারপাশজুড়ে ভরে গেছে আগাছায়। চারদিকে নিরাপত্তা দেয়াল তিন-চার ফুটেরও কম। জানা গেছে, সাতকানিয়া থানা রোডে বেশ কয়েক বছর আগে উপজেলা ডাকঘর নির্মাণের পর অযত্নে আর অবহেলায় পরিত্যক্ত হয় পুরনো দুটি ভবন ও তার আশপাশ। ফলে আশপাশে থাকা ৩৬ শতক জমিতে চোখ পড়ে স্থানীয় ডেভলাপার সিন্ডিকেটের। ওই সিন্ডিকেটটি স্থানীয় রাজনীতিবিদদের হাতে নিয়ে এসব সম্পত্তি কব্জা নিতে ডাকভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে দৌড়ঝাঁপ করে। সিন্ডিকেটরা ডাকঘরের এসব জায়গাকে পরিত্যক্ত দেখিয়ে দখলের পাঁয়তারা করে ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে।
তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের নজরে এলে তাদের স্বপ্ন ভেস্তে যায়। তাঁর নির্দেশে সার্ভে করে সীমানা প্রাচীরের প্রস্তাবনা যায় ঢাকায় ডাকভবনে। তবে সরকারের শেষমুহূর্ত হওয়ায় তা আর আগায়নি। পরে নতুন করে সরকার গঠনের পর ওই সিন্ডিকেটটি আবারো পুরনো তৎপরতা শুরু করে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে তা আর বেশিদূর নিতে পারেনি ওই সিন্ডিকেটটি। তবে এখনো পুরনো কায়দায় নতুন কোন চ্যানেলে জায়গাটি গ্রাস করে নিতে পারে বলে শঙ্কা অনেকের।
সাতকানিয়া উপজেলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার চন্দ্রনাথ আচার্য্য বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে যোগদান করেছি মাত্র। বেশ কিছু বিষয় আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। শিগগির মুছে যাওয়া সাইনবোর্ডটি সরিয়ে নতুন সাইনবোর্ড লাগানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নিচ্ছি।’ একই বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল গোপাল নাথের সাড়া পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে এবং হোয়াটসঅ্যাপে বিস্তারিত লিখে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে চট্টগ্রামের পোস্টমাস্টার জেনারেল সালেহ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক বিভাগের সম্পত্তি দখলের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। আমরা ডিসেম্বর নাগাদ সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ পোস্ট অফিসের সংস্কার কাজে হাত দেব।’
সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে ডাকবিভাগের পরিচালক (পরিকল্পনা) আল মাহবুব বলেন, সাতকানিয়া উপজেলা পোস্ট অফিসসহ বিভিন্ন পোস্ট অফিসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা তাগাদা দিচ্ছি, অতি শিগগির এটির অনুমোদন পাবো বলে আশা করছি। অনুমোদন পেলেই সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
পূর্বকোণ/এএইচ