চট্টগ্রাম শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪

ফের ‘বিতর্কে’ সাবেক এমপি মোস্তাফিজ

নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর ও দলের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে কটুক্তি করে বিতর্কের জন্ম দেন তিনি

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৬ জুলাই, ২০২৪ | ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সংসদ সদস্য থাকাকালীন নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বার বার আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন বাঁশখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। সংসদ সদস্যের পদ হারানোর পরও বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না তার। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এক সাংবাদিককে হাড্ডি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। হুমকি দেওয়ার দুটি অডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন ওই সাংবাদিক। পৃথক দুটি ঘটনায় ফের সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।

 

গত ৩০ জুন মোবাইল ফোনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরকে হুমকি ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নির্মাণের নামে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজ চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন আবদুল গফুর। সেই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে মোস্তাফিজ তাকে গালিগালাজ করেন। মোস্তাফিজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি গফুরকে হাড় গুঁড়ো করে দেওয়ার হুমকি দেন।

 

এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সাবেক এমপির তোপের মুখে পড়েন এক সাংবাদিক। তাকেও হাড্ডি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন মোস্তাফিজুর রহমান। হুমকি দেওয়ার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

 

এই বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সন্ধ্যায় বাঁশখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মোবাইলে ফোন দেওয়া হয়। পরে ফোন দেবেন বলে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার কল দেওয়ার পরও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

 

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন ছিলেন। গত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন তিনি।

 

নির্বাচনে প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোটের দিনেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হুমকি দেওয়ায় ভোটগ্রহণকালীন (শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে) মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন।

 

ভোটের প্রচারণায় মোস্তাফিজের লোকদের গ্রেপ্তার করলে পুলিশের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্ককে হুমকি দেয়া চেয়ারম্যান মুজিবুল হকের গায়ে হাত না দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

 

২০১৪ সাল টানা দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। সংসদ সদস্য থাকাকালীন নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর, মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কটুক্তি, সাবেক পৌর মেয়রকে হেনস্তা ও পিস্তল উঁচিয়ে মামলা করাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বার বার সমালোচনায় ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এবার পিস্তল হাতে নিয়ে মিছিল করে আলোচনায় আসেন তিনি।

 

২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সরকার ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। ২০২০ সালে এমপির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে সমালোচনায় আসেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান।

 

২০১৬ সালের ১ জুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল কবীরকে মারধর করার অভিযোগে থানায় মামলা করেছিল নির্বাচন কমিশন। পছন্দ মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করা হয়েছিল। এ বিষয়ে এমপির বিরুদ্ধে মামলা ও বাঁশখালীর সব কটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করেছিল ইসি। এছাড়াও ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট