চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

নাফ নদীতে ভাসছে শত শত রোহিঙ্গাবোঝাই ডিঙি নৌকা

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

টেকনাফ উপজেলার নাফ নদী জিরো লাইন দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে শতাধিক রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাকে প্রতিহত করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা। রবিবার (গতকাল) উপজেলার নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টের জিরোলাইন থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই বেশ কয়েকটি নৌকাকে প্রতিহত করা হয়। এদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় মিয়ানমারের শত শত রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়া সংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছে বলে জানা গেছে।

টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফুল্লাহিল মাজিদ বলেন, ‘রবিবার সকালে নিয়মিত টহল চলাকালীন সময়ে নৌকা বোঝাই শতাধিক রোহিঙ্গার দলকে নাফ নদীর জিরো লাইন থেকে প্রতিহত করা হয়। পরে নৌকাগুলো মিয়ানমারের ফিরে যেতে বাধ্য হয়। নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তারা যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সীমান্তে ও নাফ নদীতে কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে’।

 

এদিকে নাফ নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় শত শত রোহিঙ্গা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নদীতে ভাসছে। টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শীলখালী ও বলিবাজার এলাকার বাসিন্দাদের সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব এলাকার শত শত বাসিন্দা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় টেকনাফ ও উখিয়া সংলগ্ন নাফ নদীতে নৌকা নিয়ে ভাসছে। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাতে নজরদারি এড়িয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে অনেকেই। টেকনাফের লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কানজরপাড়া এলাকাসহ নাফ নদীতে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে তারা মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যায়। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়।

 

বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র মতে, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাবোঝাই ৫-৬টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময় টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে।

 

উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর চৌধুরী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। শুনেছি বলিবাজার থেকে কিছু রোহিঙ্গা নদীতে ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে, সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করার জন্য। এর আগেও ২৩ জন রোহিঙ্গা অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আমি তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। আমরা সজাগ আছি, কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না’।

 

টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালীর বাসিন্দা রবিউল বলেন, ‘আমাদের এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডিঙি নৌকা নিয়ে বাংলাদেশ সীমার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। তারা কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু বিজিবির বাধায় ঢুকতে পারিনি। তারা মিয়ানমারের শহর কুমিরখালীর বাসিন্দা। কুমিরখালী ঘাঁটি দখল নিতে কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

 

হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা কায়সার বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত দিয়ে দু’জন রোহিঙ্গা নারী অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। পরে বিজিবি আটক করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়। লম্বাবিল এলাকার সীমান্ত দিয়ে খালি চোখে নাফ নদীতে রোহিঙ্গা বোঝাই ৩-৪টি ডিঙি নৌকা দেখা যায়’।

 

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, ‘আমাদের এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রবেশের চেষ্টা করছে। দুই থেকে তিন দিনে ৬ জন রোহিঙ্গাকে বিজিবি আটক করে পুশব্যাক করেছে। আরও কিছু রোহিঙ্গা ডিঙি নৌকা নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করছে বলে শুনেছি। এজন্য আমার সব ইউপি সদস্যদের সর্তক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে’।

 

উনছিপ্রাং ২২নং ক্যাম্পের হেড মাঝি রফিক বলেন, ‘কুমিরখালী ঘাঁটি দখল নিতে কয়েকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবার আছে। এলাকাগুলোতে ব্যাপক হামলা হচ্ছে। অনেকেই ঝুঁকিতে আছে’।

 

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সব সময়ই সজাগ আছি। সরকারের কঠোর নির্দেশনা মতে কোন রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেয়া হবে না’।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট