রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মাথাব্যথা না থাকলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে চলছে রাঙ্গুনিয়া থেকে পরপর চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেতে প্রতিযোগিতা।
এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা সমর্থক সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। সবাই দৌড়াচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকার বাসা ও অফিসে। তবে এখন পর্যন্ত ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছাড়া কেউ একাজে সফল হতে পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে না। নির্বাচনী যুদ্ধে নামার প্রস্তুতির কথা জানালেও সবার কপালে সিগন্যাল অনিশ্চিতের চিন্তার ভাঁজ লক্ষ্যণীয়। নৌকায় চড়ে স্থানীয় সরকারের উপজেলার শীর্ষপদে আসীনের স্বপ্নে বিভোর থাকা অনেকেরই স্বাদ পূরণের অন্তরায় সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত।
তবে এ মুহূর্তে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার প্রায় তিন লাখ ভোটার ও চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৃষ্টি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে। তিনি কী ইশারা দেবেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা সকলের। তবে গ্রিন সিগন্যাল পেতে নিজেদেরকে নানাভাবে উপস্থাপন ও দল ভারী করার প্রতিযোগিতা লক্ষ্যণীয়। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এবারের নির্বাচনে এ পর্যন্ত ডজন খানেক ব্যক্তি সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন ভোটারদের কাছে।
তারা হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মদ আলী শাহ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকতার কামাল চৌধুরী সিআইপি, উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওসমান গণি চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গিয়াস উদ্দিন খাঁন স্বপন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, আটাবে’র চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবু জাফর, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খায়রুল বশর মুন্সি।
সম্ভাব্য এসব প্রার্থী এখন দল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুকম্পা পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হলে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতার আশাবাদী দুই-তিনজনের বেশি মাঠে থাকবেন বলে মনে হচ্ছে না। এ ক’জনের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে শেষতক দুয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়ায় প্রথম নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন কাজী এম এন আলম ও দ্বিতীয়বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন প্রয়াত এম এ জব্বার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৃতীয়বার নির্বাচিত হন বর্তমান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ হাসনাত। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ আলী শাহ।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত খলিলুর রহমান চৌধুরী। তিনি ২০২০ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে ইন্তেকাল করলে একইবছরের ২ নভেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। এরপর বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বলেন, আমার নেতা ড. হাছান মাহমুদ। তার বদান্যতায় আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। আমাদের প্রয়াত নেতা খলিল সাহেবের রেখে যাওয়া বাকি সময়টুকু আমি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। এবারও নেতা যেই সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই শিরোধার্য।
মুহাম্মদ আলী শাহ বলেন, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও দলের নেতাকর্মীরাই আমার প্রাণ। তারাই নিজেরা চাঁদা তুলে ২০১৪ সালে আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। তাই এবারও আমি দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে চাই।
কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছি। জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। নেতৃত্বের যোগ্যতা এবং ত্যাগের বিষয় বিবেচনা করে এবার দলের সমর্থন চাইবো।
তৃণমূল পর্যায়ে দক্ষ সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে উল্লেখ করে ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচবছরে চেষ্টা করেছি মানুষের সেবায় কাজ করতে। দলের সমর্থন পেলে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে জয়ী হবার ব্যাপারে আশাবাদী।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার বলেন, দু’বার ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও দলের দায়িত্বশীল পদে আছি। রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে আমার সাংগঠনিক তৎপরতা বিদ্যমান। আমার নেতা ড. হাছান মাহমুদ ও দল যদি মনে করে আমাকে দিয়ে উপজেলা সামলানো সম্ভব, তাহলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি আছে।
তবে আলোচনায় থাকা সম্ভাব্য এসব প্রার্থীর একটাই কথা, ‘আধুনিক রাঙ্গুনিয়ার রূপকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যেই সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই সবাই মেনে নেবেন। তিনিই বেছে নেবেন রানিংমেট কে হবেন।’
পূর্বকোণ/এএইচ