চট্টগ্রাম রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

সীতাকুণ্ডে ৮ দিন পর অবরুদ্ধ প্রবাসীর স্ত্রীকে উদ্ধার করলেন ইউএনও

সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা

৬ জুন, ২০২৩ | ১০:৫৫ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা দেলিপাড়ার কেরামত আলী কারিগর বাড়িতে ৮ দিন ধরে অবরুদ্ধ থাকা প্রবাসী সেলিমের ঘরের সামনে দেয়া ঘেরা-বেড়া ভেঙে তার স্ত্রীর চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দিলেন ইউএনও।

 

আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকালে তিনি সরেজমিনে গিয়ে একটি পরিবারকে এভাবে ঘিরে রেখে চলাচলের পথ বন্ধ করে রাখায় বিস্মিত হন এবং তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিয়ে তাকে ঘেরা-বেড়া মুক্ত করে দেন।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা দেলিপাড়ার কেরামত আলী কারিগর বাড়ির মৃত মো. গনির স্ত্রী আরফা খাতুন, তাদের চার ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনী নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিন্তু সম্পত্তি নিয়ে একপুত্র সেলিমের সাথে অন্য ভাইদের চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেলিম বিদেশে থাকেন। বাড়িতে থাকেন তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও কিশোর বয়সী দুই সন্তান। ঐ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ২৭ মে সেলিমের ঘরের দরজাসহ চারপাশে বাঁশ ও টিনের ঘেরা দিয়ে ফেলেন অন্য ভাইয়েরা।

 

তারা দাবি করেন ঘেরার পাশের উঠোনে বৃদ্ধা মায়ের থাকার জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এদিকে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা, প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন প্রবাসী সেলিমের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

 

অন্যদিকে মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারসহ নানান অভিযোগ তুলে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মা আরফা খাতুন। এমতাবস্থায় ঘটনাটি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে আজ বিকালে সেখানে ছুটে যান সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব সভাপতি সৌমিত্র চক্রবর্তী, সাবেক সভাপতি সেকান্দার হোসাইন, অর্থ সম্পাদক সবুজ শর্মা শাকিল, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদ চৌধুরী, ইউপি সদস্য মো. হারুনুর রশিদ।

 

তারা সেখানে যাবার পর প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরের সামনের ঘেরাটি দেখে দুইপক্ষের সাথে কথা বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

 

তিনি বলেন, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘরে রেখে বাইরে আপত্তিকরভাবে ঘেরা-বেড়া দেয়া হয়। এতে তার চলাচল করা সত্যিই কঠিন ছিল। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ সেলিমের অন্য ভাই ও মা অভিযোগ করেন যে সেলিমের স্ত্রী তাদের একটি জায়গায় কাজ করতে বাধা দিয়ে ১৪৫ ধারা জারি করান। তাই সেই ঘরের কাজ বন্ধ আছে। এখন তাদের মায়ের থাকার জন্য নিজস্ব একটি ঘর দরকার। তাই তারা সেলিমের ঘরের সামনের উঠোনে সেই ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

 

ইউএনও আরও বলেন, চার সন্তান থাকতেও একজন সন্তানও মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে রাজি নন। এ কারণে তিনি পৃথক থাকার ঘর করতে চান। কিন্তু মাকে ভরনপোষণ না দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি সে কথা তাদের বলেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকেও বলেছি প্রবাসীর চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত থাকবে। রাস্তা উন্মুক্ত রেখে তাদের জায়গা পরিমাপ করে সবাইকে বুঝিয়ে দিতে। এতে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী।

 

কুমিরার ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী অবরুদ্ধ আছেন জানিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু আমাকে তার পক্ষে কেউ অভিযোগ না করায় আমি বিস্তারিত জানতাম না। এখন ইউএনও স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন প্রবাসীর স্ত্রীর চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/সৌমিত্র/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট